বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুর উপজেলায় সাত বছরের শিশু তোফাজ্জল হোসেনও দিরাই উপজেলার তুহিনের মতো পারিবারিক নৃশংসতার বলি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণের চিরকুটের সূত্র ধরেই তদন্তে এগোচ্ছে পুলিশ। ঘটনায় দুই চাচা ও ফুফু জড়িত থাকতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। চাচা বা ফুফুর স্বামীর পরিবার নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।
রোববার তোফাজ্জলের দুই চাচা ও ফুফুসহ সাতজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণের পর আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
৮ জানুয়ারি নিখোঁজের পর ১১ জানুয়ারি ভোরে চোখ উপড়ানো ও পা ভাঙা তোফাজ্জলের লাশ বস্তায় ভরে প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে যায় ঘাতকেরা। তোফাজ্জল তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত গ্রাম বাঁশতলার জোবায়ের হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় জোবায়ের হোসেন অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। পুলিশ শনিবার দুপুরেই দুই চাচা ফুফুসহ ৭জনকে আটক করেছিল।
রোববার দুপুরে তাহিরপুর থানা পুলিশ আটককৃতদের তাহিরপুর আমলগ্রহণকারী আদালতে প্রেরণ করে। আদালত সবাইকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়ে আজ সোমবার শুনানির নির্দেশ দেন। কারাগারে যাদের পাঠানো হয়েছে তারা হলো- শিশু তোফাজ্জল হোসেনের চাচা সালমান হোসেন (২৫), লোকমান হোসেন (২১), ফুফু শিউলি আক্তার (১৯), শিউলি আক্তারের স্বামী সেজাউল করিম ও তার বাবা কালা মিয়া (৫৫), প্রতিবেশী হবিবুর রহমান (৫৫) তার ছেলে সারোয়ার হোসেন (২৩)।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় শিশু তোফাজ্জল হোসেন। বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা অনেক খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় তোফাজ্জলের দাদা ৯ জানুয়ারি থানায় জিডি করেন। জিডির দিন রাতেই কে বা কারা শিশু তোফাজ্জলের জুতাসহ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণের একটি চিরকুট বাড়ির বারান্দায় রেখে যায়। এ বিষয়টি পরদিন পুলিশকে জানান পরিবারের লোকজন। শনিবার ভোরেই চোখ উপড়ানো লাশ বস্তায় ভরে প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে ফেলে যায় ঘাতকরা।
জানা গেছে, প্রায় ১ বছর আগে তোফাজ্জলের ফুফু শিউলি বেগমকে একই গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে সেজাউল কবিরের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই তোফাজ্জলের পরিবারের ঝগড়া চলছে। এ নিয়ে সেজাউলের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। দুই পরিবারের আত্মীয়দের মধ্যে এই কোন্দলের জের ধরেই শিশু তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। পুলিশ নানা আলামত ও মুক্তিপণের চিরকুটের সূত্রে এ ঘটনায় ফুফু, দুই চাচা ও ফুফুর স্বামীকে সন্দেহ করছে। এই সন্দেহে ফুফুর শ্বশুর ও প্রতিবেশী পিতা-পুত্রও আছেন। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে চিরকুটের সূত্র ধরেই ঘাতকের কাছে পৌঁছে যাওয়া সহজ হচ্ছে।
শিশু তোফাজ্জলের বাবা জুবায়ের হোসেন বলেন, সেজাউল কবির ও কালা মিয়া আমার ছেলেকে অপহরণ করে খুন করেছে। আমি তাদের শাস্তি চাই। এ ঘটনায় আমার পরিবারের কেউ জড়িত হলেও তাদেরও শাস্তি চাই। এদিকে সন্তানকে হারিয়ে মা রিয়া বেগম নির্বাক হয়ে গেছেন। তিনিও ছেলের ঘাতকদের ফাঁসি চান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাহিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের রোববার আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে ৫ থেকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য আগামীকাল (আজ সোমবার) দিন ধার্য করেছেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, এই নৃশংস ঘটনায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের রয়েছে। খুনিদের মুক্তিপণের চিরকুটের মাধ্যমে আমরা মূল ঘাতকদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা অধিকতর তদন্তে নেমেছি। অনেক ক্লু আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। যাদের আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যেই ঘাতক রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তাছাড়া তদন্তে অন্য কেউ জড়িত থাকলেও তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, শিশু তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডও দ্রুততম সময়ে অধিক তদন্তের মাধ্যমে চার্জশিট গঠন করা হবে। খুনিদের কেউ রেহাই পাবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৪ অক্টোবর দিরাই উপজেলায় পরিবারের সদস্যদের হাতেই নির্মমভাবে খুন হয় পাঁচ বছরের শিশু তুহিন। গ্রামের অন্যদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের বাবা-চাচা-চাচাতো ভাই মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।