1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জেলা প্রশাসনের অনন্য উদ্যোগ : দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিজয় শুভেচ্ছা জানানো হল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ স্বজনদের

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

শামস শামীম ::
‘তোমাদের হাড়গুলো বাংলার হৃদপিণ্ডে অবিনাশী ঝড় / বাঙালির জন্মতিথি, রক্ত লেখা ষোল ডিসেম্বর’। কবি নূরুল হুদা এভাবেই জাতিরাষ্ট্রের জন্মযোদ্ধাদের শাশ্বত মহিমায় অবিনাশী শব্দবুননে স্মরণ করেছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ও বীরাঙ্গনাদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ফুলেল সম্মাননা জানিয়েছে। শীতের সকালে হাতে ফুলের তোড়া, মিষ্টি ও শুভেচ্ছা উপহার নিতে গিয়ে অবাক হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ও বীরাঙ্গনারা। বিজয়ের মাসে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। অশ্রুসজল নয়নে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।
শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকাল থেকেই জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া এই বিরল সম্মাননার ঘটনায় অবাক হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের স্বজনরা। এদিকে প্রশাসনের অনন্য এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন সম্মান ও সহায়তার ধারাবাহিকতা কামনা করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, শাল্লা, দোয়ারাবাজারসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ছুটে যান। সেখানে বসবাসরত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন। এছাড়াও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদেরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্মান জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে বসবাসরত প্রথম শহীদ আবুল হোসেনের স্ত্রী রহিমা বেগমের কাছে ছুটে যান। তিনি তার বসতঘরে গিয়ে ফুলের তোড়া, লাল সবুজের উত্তরীয় ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন। এময় জেলা প্রশাসককে বসবাসের জন্য একটি বসতঘর প্রদানের অনুরোধ জানান এই শহীদ জায়া। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে বসবাসের জন্য একটি বসতঘরের ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। এসময় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭১ সনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন। তারা কেবল, জীবন ও সম্পদের মায়াই ছাড়েননি, পারিবারিক ভালোবাসা ও বন্ধনকেও তুচ্ছ করে জীবন বিলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ত্যাগের শাশ্বত স্মারক রচনা করেছেন। তাদের সম্মান জানাতেই জেলা প্রশাসন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি ফুলেল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত করে এসেছেন।
এদিকে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ একই উদ্দেশ্যে দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রফিনগরে যান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামের মাতা ফুলজান বিবির কাছে। শতবর্ষী এই শহীদ জননীকে তার বাড়ি গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সঙ্গে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে উপহারসামগ্রী দিয়ে আসেন তিনি। জেলা প্রশাসক তাকেও একটি বসতঘর নির্মাণের আশ্বাস দেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ ইকবাল চৌধুরী দিরাই উপজেলার টুকচাঁনপুরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের দাসপার্টির কমান্ডার শহীদ জগৎজ্যোতি দাসের বোন ফুলু রানী দাসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। তিনিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
এদিকে আগের দিন শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ সিলেট শহরে অবস্থানরত সেলা সাব-সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীককে তার বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলার বীরপ্রতীক আব্দুল হালিম, বীরপ্রতীক আব্দুল মজিদকে তাদের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হবে। একই উপজেলার ঝিরাগাঁও গ্রামে গিয়ে বীরপ্রতীক কাকন বিবির মেয়ে সখিনা বিবিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে।
দিরাই-শাল্লা উপজেলার বীরাঙ্গনা পিয়ারা বিবি, জমিলা খাতুন, মুক্তাবান বিবি, প্রমিলা দাস, কুলসুম বিবি ও আলিফজান বিবিকে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি তাদের সুখ-দুঃখের গল্প শুনেন। ফুল হাতে, উপহার নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখে আবেগাপ্লুত হন বীরাঙ্গনারা। প্রশাসন তাদের সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
সদর উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ছুটে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হারুনুর রশিদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য অ্যাডভোকেট খায়রুল কবীর রোমেন, সদস্য জুনেদ আহমদ। তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ আব্দুন নূর বীরপ্রতীকের মেয়ে হোসনে আরাকে তার বাড়ি গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। হোসনেআরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তার দুয়ারে পেয়ে নানা দাবি তুলে ধরেন। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
এভাবে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিনব্যাপী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ও বীরাঙ্গনাদের শুভেচ্ছায় সিক্ত করে আসেন। অশ্রুসজল নয়নে মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও শহীদদের স্বজনরা শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। এসময় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা তাদের সুখ দুখের কথা শুনেন।
মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ স্বজনদের দুয়ারে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর এমন উদ্যোগকে প্রশংসা জানিয়ে সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ও উপেক্ষিত জীবনযাপন করছেন। ৭৫-এর পর পরিচয় গোপন করে পালিয়ে থেকেছি আমরা। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন জাতির জনকের কন্যা। আমরা এ কারণে খুশি। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এমন বিরল উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা ও অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা নিচ্ছে তা বাতিল করার আহ্বান জানাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের সকল মহান মুক্তিযোদ্ধাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগেই আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীরাঙ্গনা, বীরপ্রতীক ও শহীদ স্বজনদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বলেছি আপনারা, আপনাদের স্বজনরা এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা পুরো বাংলাদেশ আপনাদের পাশে আছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com