স্টাফ রিপোর্টার ::
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পূর্ব পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেজমেন্টের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের বালু, কংক্রিট। ফলে নির্মাণাধীণ ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে অধিক মুনাফা লাভে যাচ্ছেতাই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ভবন নির্মাণকাজ সিডিউল অনুযায়ী হচ্ছে দাবি করলেও সরেজমিনে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন্নাহার শাম্মী। বেজমেন্টের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন ও নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীকে তলব করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানাযায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্ব পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজটি পায় বিশ্বজিৎ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা না হলেও প্রায় ৩ মাস আগে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জায়গার সংকুলান না হওয়ার অজুহাতে শহীদ মিনার অন্যত্র নেয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভেঙে মূল ভবনের বেইজ স্থাপনের জায়গা করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিকল্প জায়গা থাকলেও শহীদ মিনার ভাঙ্গায় এ নিয়ে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এদিকে ভবনের মূল বেইজের এক-দেড় ফুট কাছ থেকে গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে ভবনের ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) তৈরি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বেইজের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে, ভবন নির্মাণকাজে ব্যবহারকৃত বালু ও কংক্রিট নিম্নমানের বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের কাজে ব্যবহৃত বালুতে ধুলোর পরিমাণ বেশি, ভবন সিডিউলে ১ ইঞ্চি পরিমাণ বড় কংক্রিট ব্যবহার করার কথা থাকলেও কংক্রিটে গুঁড়োর পরিমাণ বেশি। কংক্রিটের কোয়াও নিম্নমানের। গত বৃহস্পতিবার নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন্নাহার শাম্মী। বেজমেন্টের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন ও নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় আগামীকাল সোমবার অফিসে তলব করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইংরিত মিয়া ও যুবরাজ জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের ৪ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ভবনের বেজমেন্টের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন ও নির্মাণকাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আমাদের। আমরা লক্ষ করছি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণকাজে বড় ধরনের অনিয়ম করছেন।
তবে নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি বিশ্বজিৎ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ রায়ের। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেই উত্তর দিতে হবে নাকি। সবকিছু ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করা। বেইজের নিকট থেকে মাটি উত্তোলনের ব্যাপারে ঠিকাদার বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুমতিতে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশলের উপ-প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে। তবে কিছু মানুষ অহেতুক প্রশ্ন তুলছেন। বেইজের নিকট থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন্নাহার শাম্মী বলেন, নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইটের কংক্রিটের কোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। বালুর অবস্থাও খারাপ। বেইজের নিকট থেকে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। আগামী সোমবার বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে অফিসে ডাকা হয়েছে।