বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের একটি বড় অংশ ‘হাসপাতালে ওষুধ না থাকায়’ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের পরামর্শে বাইরে থেকে অধিকমূল্যে ওষুধ কিনছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা নিম্নবিত্ত সাধারণ চিকিৎসাসেবাপ্রার্থীদের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে হাসপাতালের সম্মুখের কোনো কোনো অসাধু ফার্মেসি ব্যবসায়ী দিনের পর দিনে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা গুরুতর রোগীরা অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকর্মের শিকার হচ্ছেন।
জানা যায়, দুর্ঘটনায় আহত, সংঘর্ষে জখম, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাতে রোগীরা প্রথম জরুরি বিভাগের ডাক্তার ও নার্সদের শরণাপন্ন হন। তাদের চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়েই সাদা কাগজের স্লিপে জরুরি কিছু ওষুধের তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয় রোগীদের স্বজনদের হাতে। জরুরি বিভাগের আশপাশে হাসপাতালের সম্মুখের কোনো কোনো ফার্মেসির নিযুক্ত দালালচক্র স্লিপ হাতে থাকা রোগীর স্বজনদের ফুসলিয়ে নির্ধারিত ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ স্বজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে আসা স্বজনের কাছে তখন ওষুধের মূল্য মুখ্য বিবেচিত না হাওয়ার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ফার্মেসিওলারা ওষুধের ইচ্ছেমাফিক মূল্য হাতিয়ে নেন।
এদিকে, ইচ্ছেমাফিক ওষুধের মূল্য আদায়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ওষুধের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের বেশি নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
জানা যায়, হাসপাতালের সম্মুখের বছরের পর বছরে ধরে অসাধু ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের চালানো এই অপব্যবসার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব থাকায় তাদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলছে। তাদের এই বেপরোয়া মানসিকতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন হাসপাতালে চিকৎসা নিতে আসা নি¤œ আয়ের হাজারো মানুষ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রামের রোগীর স্বজন রিয়াছত আলী জানান, খিঁচুনি রোগীর জন্য প্রেসক্রাইব করা স্বল্পমূল্যের সেডিল ইনজেকশন হাসপাতালের সামনের অনেক ফার্মেসিতে রোগীর স্বজনদের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। সাধারণ মানুষ কোন ওষুধের দাম কত, সেই বিষয়টি না জানায় কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না। তাছাড়া বোতলজাত ওষুধের গায়ে মূল্য লেখা থাকলেও ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপসুলের পাতায় মূল্য লেখা না থাকায় এসব ওষুধগুলো একেক দোকানে একেক রকমের মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের সম্মুখের ফার্মেসিগুলোতে রোগীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমাফিক মূল্য আদায় করা হয়। অস্ত্রোপচারের (অপারেশন) রোগীদের ওষুধসহ নানা সামগ্রী ক্রয়ের প্রয়োজন পড়ায় অসাধু ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের অধিকমূল্য আদায়ের শিকার হন বলে জানা যায়। এ নিয়ে প্রায়ই রোগী কিংবা তাদের স্বজনদের সাথে বাকবিত-া হয় ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে, হাসপাতালের অনেক স্টাফ আড়ালে ফার্মেসি ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকায় ডাক্তারের পরামর্শের বাইরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রাইব করারও অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওষুধ ফের ফার্মেসিতে এনে বিক্রি করা হয়।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সম্মুখে ওষুধের অতিরিক্ত মূল্য আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। করলে ওষুধ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ বলেন, অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।