কিছু মানুষের নাম থাকে যা অবিনশ্বর। এসব নাম হৃদয় থেকে উপেক্ষা করার শক্তি কারো হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনই একটি নাম। শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি উচ্চারিত না হলে উচ্চারণ প্রায় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই নামকে জোর করে যেমন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন পড়ে না, ঠিক তেমনি জোর করে মুছে দেওয়াও সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সে তুং, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভিয়েতনামের হো চি মিন, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ঘানার প্যাট্রিস লুমুম্বা, নামিবিয়ার স্যাসু নজুমা, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো, সোভিয়েত ইউনিয়নের যেমন লেলিন ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই বাঙালি কখনো বিচ্ছিন্ন, কখনো পরাজিত, কখনো বিভ্রান্ত, নয়তো বিপর্যস্ত। সেই বাঙালির জন্য প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম আবাসভূমির স্থপতির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু মহান এবং শ্রেষ্ঠ বাঙালিদের মধ্যে সবার সেরা। বঙ্গবন্ধু তাঁর শ্রম, মেধা আর ত্যাগে পাকিস্তানের স্বৈরাচার, ধর্মীয় মিথ্যাচার আর শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদেরকে দুর্বার অধিকার সচেতন করে তুলেছিলেন। বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তিনি শুধু শুরু করেননি সেই আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন অভাবিত এক সাফল্যে। শেখ মুজিব হয়েছিলেন বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার নাম।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এক জাতি হয়েও বাঙালি কখনো এক পাল্লায় ওঠেনি। সুদীর্ঘ ইতিহাসে স্বশাসিত হবার বড় একটা সুযোগ ঘটেনি বাঙালির। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, লোভ, দাসত্ব বার বার আঘাত করেছে বাঙালিকে। এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি বাঙালি, স্বশাসিত স্বাধীন হবার আশা তাই ম্লান করেছে দুর্ভাগ্য। বঙ্গবন্ধুই প্রথম সবল-সফল রাজনৈতিক পুরুষ যিনি অসীম দৃঢ়তায় বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন। ধর্মীয় গোড়ামী আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই বাঙালি এক আত্মা হয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জীবনপণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সাথে হত্যা করেছিল কিছু কুলাঙ্গারের দল তার পরিবারের প্রায় সকলকে, শিশুকে, বয়োবৃদ্ধকে, নববধূকে। এই হত্যাকা- যে বাঙালির ইতিহাসের বর্বরতম, নিষ্ঠুরতম এক হত্যাকা-, কোনো সন্দেহ নেই এতে।
মানুষ যখন জন্মায় তখন মৃত্যু তার অবধারিত। বঙ্গবন্ধু যখন বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখনো তিনি পাকিস্তানিদের হাতে প্রাণ হারাতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে যখন পাকিস্তানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল তখনও তিনি প্রাণ হারাতে পারতেন। কিন্তু তারা সাহস করেনি, তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল বাঙালি বিপথগামী কিছু বেঈমান। সেই হত্যাকা-ে যারা নিমরাজি ছিলেন, তথাকথিত প্রগতিশীল – মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নীরবে খুনী হয়েছিলেন, প্রতিবাদ করতে চাইলেও সাময়িক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য করেননি, আমার বিশ্বাস সেই মানুষরাও বড় মুজিবপ্রেমী সেজে স্বার্থ-সিদ্ধির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে এখনো এবং তারা সংখ্যায়ও বেশি। আর আমরা যারা সেদিন নির্যাতিত হয়েছিলাম তারা অনেকেই আজ অস্পৃশ্যের খাতায় উঠেছি। তাই আমি মনে করি এই জোয়ারেও আসল প্রেমিকদের সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে শ্রদ্ধায়, ভালবাসায়, অহংকারে।