1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ঢাকায় অপহৃত সাংবাদিক সুনামগঞ্জে উদ্ধার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টার ::
গত শনিবার ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া মোহনা টিভির সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের গোবিন্দপুর মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় স্থানীয় স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজে আসার পথে তাকে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে নিয়ে যেতে গুলশান থানা পুলিশ ও তার স্বজনরা সুনামগঞ্জ আসার পর স্থানীয় পুলিশ তাকে হস্তান্তর করেছে।
পুলিশ ও মুসল্লিরা জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মুসল্লিরা মসজিদে ফজরের নামাজের জন্য আসছিলেন। এ সময় লক্ষ্য করেন একজন মানুষ হন্তদন্ত হয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে তিনি পড়ে যান। তারা তাকে মসজিদে নিয়ে নাকমুখে পানি ছিটা দেন। তার জ্ঞান ফিরলে তিনি পানি পান করতে চান এবং জায়গার নাম জানতে চান। পরে তিনি তার পরিচয় দিলে মুসল্লিরা থানায় যোগাযোগ করেন। সদর থানার এসআই জিন্নাতুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে তাকে চিকিৎসা দিয়ে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। হাসপাতালের বেডে শুয়েই তিনি তার স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশকেও নানা বিষয়ে তথ্য দেন।
এ সময় সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, ৩ আগস্ট গুলশান গোল চত্বরের একটি হোটেলে তার মামার সঙ্গে নাস্তা খান। এরপর মিরপুরে নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। কিন্তু বাসে ওঠার পর তিনি বুঝতে পারেন যে, বাসটি মিরপুরের নয়। এক পর্যায়ে বাসের লোকজন তার মুখে পানি জাতীয় কিছু ¯েপ্র করে। এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারেননি। জ্ঞান ফিরলে মুশফিক বুঝতে পারেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
সাংবাদিক মুশফিকুর আরো বলেন, অপহরণের পর আমার চোখ বেঁধে নানা জায়গায় নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পানি খেতে চাইলে অপহরণকারীরা তাকে পানি খেতে দেয়নি। গত কয়েক দিনে তাকে কেক ও পেয়ারা খেতে দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জে এসে ফেলে যাবার আগে গাড়িতে জিজ্ঞেস করে আমাকে নিয়ে কেন মিডিয়ায় এতো তোলপাড়। এসব কথা বলে আমাকে কিলঘুষি ও লাথি দেয়। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমাকে কেন অপহরণ করা হয়েছে জানিনা। তবে সম্প্রতি কুমিল্লায় একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর আমাকে বিরোধীরা হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। তারা কাউকে দিয়ে এটা করিয়েছে কি না সেটা তদন্ত হওয়া উচিত।
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ব্যথায় তিনি কাতরাচ্ছিলেন। চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক। মাঝে মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পুলিশের প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছিলেন।
জানাযায়, সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চরগোয়ালী এলাকায়। কয়েকদিন আগে তিনি চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী তার বিরোধিতা করতে থাকেন। যার মধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার প্রভাবশালী মো. মনিরুজ্জামানও ছিলেন।
সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, ঢাকার কারো সাথে আমার কোনো রকমের শত্রুতা নেই। আমি একজন সাংবাদিক। আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ও আওয়ামী লীগের সংবাদ কাভারেজ করি। আমি কারো সাথে কোনোদিন খারাপ ব্যবহার করিনি। আমাকে অপহরণকারীরা অনেক নির্যাতন করেছে। আমার শরীরের পিঠে, কোমরে, মাথায় লাথি মেরেছে। তারা চড়-থাপ্পর দিয়েছে আর বলেছে তোর এতো সাহস কোথা থেকে এলো। তুই নিজেকে কি মনে করিস। তোকে পৃথিবীর মুখ দেখতে দেয়া হবে না। তোকে আমরা মেরে ফেলবো।
মুশফিকুর রহমান বলেন, আমাকে অপহরণকারীরা বলেছে তোর শেষ ইচ্ছা কি? তখন আমি বললাম আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা বললো এটা সম্ভব না। কিছুদিন আগে চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হই এবং আমি সভাপতি হওয়ার আগে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করি। তারপরে একটি অচেনা মোবাইল নাম্বার থেকে আমার কাছে কল আসে। ওই ফোনকল থেকে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের গুম করার হুমকি দেয়া হয়। তাকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে পরিচয় দেয়নি।
গোবিন্দপুর গ্রামের উদ্ধারকারী যুবক ফুয়াদ বলেন, মুসল্লিরা মসজিদে আসছিলেন। এ সময় দেখি একজন মানুষ রাস্তায় হন্তদন্ত হয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। এগিয়ে গিয়ে আমরা দেখি তিনি কাঁপছেন, কথা বলছেন। আমরা তাকে মসজিদে নিয়ে পানি পান করাই। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালে এসে তিনি পরিবারের অনেকের সঙ্গেই মোবাইলে কথা বলেন।
সদর থানার উদ্ধারকারী এসআই জিন্নাতুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক মুশফিককে উদ্ধারের সময় তারা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পান। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা শুরু হলে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি তার মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাকে জানিয়েছেন অপহরণকারীরা তার চোখ বেঁধে নিয়েছিল। কিছু দেখতে পারেননি। মঙ্গলবার বিকেলে মুশফিকের বড়ভাই পাভেল ও মোহনা টিভির ঢাকা অফিসের একজন সাংবাদিকসহ গুলশান থানার পুলিশ এসেছিলেন। আমরা তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করেছি।
সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান সুস্থ। তিনি স্বাভাবিক কথা বলতে পারছেন। তিনি শঙ্কামুক্ত। তবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।
এদিকে মোহনা টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক মুশফিকুর রহমানকে দেখতে হাসপাতালে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ খান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখতসহ সুনামগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মীরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com