স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জে মানবপাচারকারী দালালদের তালিকা প্রণয়নে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানবপাচারকারীদের পরিচয় ও অবস্থান স¤পর্কে খোঁজখবর নিতে এবং তালিকা গঠনে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়া বাংলাদেশের লোকজনের নৌকাডুবির ঘটনা। তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ওই ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১৮ জনই ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের অধিবাসী। এর মধ্যে দুইজন সুনামগঞ্জের। তারা হলেন- ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের মো. আজির উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২২) ও দিরাই উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের চ-িপুর গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে মাহবুবুল করিম (২৬)। তারা দু’জনই মানবপাচারকারী দালালদের খপ্পরে পড়েছিলেন।
নিহত নাজিমের স্বজনরা জানান, নাজিম সিলেট নগরের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। গত বছর ছাতকের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদ নাজিমকে ইতালি পাঠানোর কথা বলেন। এরপর থেকে নাজিম পরিবারের কাছে বায়না ধরেন ইতালি যাবেন। তাঁর মা-বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ছেলের আবদারে রাজি হন। শামীমের সঙ্গে আট লাখ টাকায় চুক্তি হয়। কথা ছিল প্রথমে অর্ধেক এবং ‘গেমে’ ওঠার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে। এরপর গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রামের আরও দুই তরুণ শরিফ, শহীদসহ নাজিম বাড়ি থেকে ঢাকায় যান। পরে ঢাকা থেকে লিবিয়া। নাজিমের চাচা শাহীন আহমদ জানান, দালাল শামীম আহমেদের মাধ্যমে ৮ লক্ষ টাকায় নাজিমের ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তি হয়। নাজিমসহ অন্যদের প্রথমে লিবিয়া গিয়ে কয়েক মাস জেল খাটতে হয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে গত ৯ মে লিবিয়ার জুয়ারা শহর থেকে নৌকাযোগে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় নাজিমসহ অন্যরা। এর মধ্যে গভীর সাগরে যখন তাদের বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় তোলা হয়, তার কিছুক্ষণ পরই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তিনি আরো জানান, দালালের সাথে চুক্তি ৮ লাখ টাকার হলেও আমাদের কাছ থেকে নাজিম ইতালি যাওয়ার আগেই ১০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
অন্যদিকে নিহত মাহবুবুল করিমও বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগী বাজারের দালাল পারভেজ মিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া এবং লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়। মাহবুবুল করিমের বড় ভাই রেজাউল করিম জানান, দালাল পারভেজের মাধ্যমের ইতালি যাওয়ার জন্য রওনা হন মাহবুবুল করিম। লিবিয়া যাওয়ার পর মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গে কথা হতো। কিন্তু ছয় মাস ধরে যোগাযোগ ছিল কম। প্রায় ৮ লাখ টাকা দালালকে দিয়েছিলেন মাহবুবুলের পরিবার।
সূত্র আরো জানায়, ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিহত সুনামগঞ্জের দুই যুবকের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে দালালদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তাছাড়া মানবপাচারকারীদের হাতে কেউ প্রতারিত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে কিনা তারও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সি’র আড়ালে কেউ আদম ব্যবসা করছে কিন্তা সে সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে আমাদের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। মানবপাচারকারীদের হাতে জেলার কোনো মানুষ প্রতারিত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে কিনা তারও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তালিকা তৈরির পর মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।