সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বাংলা সাহিত্যাকাশে তার আবির্ভাবকে বলা যায় অগ্নিবীণা হাতে ধূমকেতুর মতো প্রকাশ। তিনি নিজেই নিজেকে বলেছেন, ‘বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির’। তাই তার উপাধি বিদ্রোহী কবি। আবার বলেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য।’ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছেন ঠিকই কিন্তু প্রেমময় নজরুলও হিমালয়সম শুভ্র। আজ সেই দ্রোহ ও প্রেমের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী। কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারা তৈরি করেন। উন্নত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন সাম্য আর মানবতা। ধ্যান-জ্ঞান, নিঃশ্বাস-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনায় তিনি সম্প্রীতির কবি, অসাম্প্রদায়িক মেরুদ-।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, ২৫ মে। ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই মহান কবির ১২০তম জন্মজয়ন্তী। কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। ছোটবেলায় পিতৃহারা হন। এরপর বাধার পর্বত পাড়ি দিতে হয় তাকে। তবে বাংলার সাহিত্যাকাশে দোর্দ- প্রতাপে আত্মপ্রকাশ করেন কবি নজরুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার স¤পর্কে যথার্থই বলেছেন- ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’
নজরুলের সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন- ইসলামি সঙ্গীত তথা গজল। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন, যা নজরুল সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। মধ্যবয়সে তিনি পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। এক সময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় এবং তাকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। ওই বছর ২৯ আগস্ট তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন।
কাজী নজরুলের রচিত ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুলবাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরে আরও গান গ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়ই তাৎক্ষণিক লিখতেন। এ কারণে অনুমান করা হয়, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া কাজী নজরুল গান রচনাকালে ১৯টি রাগের সৃষ্টি করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।