মাঝে মাঝে মনে হয় এ কোথায় আছি? এই বাস-অযোগ্য বাসস্থান ছেড়ে কোথায় বাস করতে যাই? প্রত্যুত্তরে চারপাশের পৃথিবী ভীষণ নীরব থাকে। নিরোত্তর মূক পৃথিবী যখন মুখর হয় তখন হয় তো শুনি বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ বা ধর্ষণের চাপে পিষ্ট কোনও মাদ্রাসাছাত্রীর করুণ আর্তনাদ। মূক পৃথিবীর এই মুখরতা নিপীড়িত মানুষের আত্মার একমাত্র প্রকাশ। আজকাল পৃথিবীর এইরূপ আর্তনাদ ভিন্ন অন্য কোনও শব্দ শোনা যায় না কোথাও। শান্তির ললিত বাণী লালিত হয় না কোনওখানে। বোমার প্রকোপে প্রকম্পিত হয় মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং চতুর্দিকে মৃত্যুর মিছিল।
যখন দৈনিক সুনামকণ্ঠের পাতায় সংবাদ শিরোনাম করা হয়, ‘ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার’ তখন মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন জাগে কই যাই? আমাদের নিজেদের গড়া এই সমাজ এতোটা বর্বর হলো কেন? আসলে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির এই সুনামির যুগে, সভ্যতার প্রভুত উন্নতির যুগে এখনও সভ্য হতে পারিনি অসভ্যই রয়ে গেছি। তা না হলে এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। এমন হলো কেন? যে-খুনি, যে-ধর্ষক সে তো আমাদেরই কেউ না কেউ, এই সমাজেরই কেউ না কেউ। ভুলে গেলে তো চলবে না যে, ব্যক্তিমানুষের বিকাশ সমাজনিরপেক্ষ কোনও বিষয় নয়। সমাজ যেমন এবং সমাজের মৌলিক উপাদান মানুষও তেমনিই। আমরা বলতে বাধ্য যে, অর্থাৎ বলতে চাই সভ্য সমাজকে আমরা অসভ্য করে গড়ে তোলেছি। এই অসভ্যতা এমন এক পর্যায়ে পর্যবেশিত হয়েছে যে, সামাজিক পীড়নরূপে আবির্ভূত হয়েছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, দোষটা কী একা তার, যে দোষী? এই দোষী দোষী হওয়ার সামাজিক ব্যবস্থা, দোষী মানুষ তৈরির উর্বর ভূমি কে তৈরি করেছে? সব কথার পরের কথা, এই দোষী এই সমাজেরই সন্তান, তাকে বাদ দিয়ে এই সমাজের অস্তিত্বকে অসম্ভব।
পরিশেষে বলতেই হয়, বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায়, বুঝা যাচ্ছে যে, বর্তমান সমাজটা একটা আস্ত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে পড়েছে। তাই এটিকে খোল নলচে সমেত বদলাতে হবে। এই বদলে ফেলার কোনও বিকল্প নেই। আর বদলে ফেলতে না পারলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অত্যাচার সইতেই হবে, খুন-ধর্ষণ-দুর্নীতি চলবেই।