শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম হাওর খরচা ও জোয়ালভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে এক সময় প্রবাহিত ছিল জিরাগ নদী। পাহাড়ি ঢলে আসা বালু ও পলিতে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে প্রায় দুই দশক আগে। জিরাকের বুক এখন ফাটা মাঠের মতো। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই নদীটি এক সময় বৃহত্তম দুটি হাওরের চাষাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। প্রাকৃতিকভাবে ফসলি মওসুমে পানি ধারণ এবং পানি নিষ্কাশনের কাজ করতো নদীটি। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর জানিয়েছে জোয়ালভাঙ্গা ও খরচার হাওরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম এই নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, এই নদীটির অবস্থান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে। তাছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলারও কিছু এলাকার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে নদীটির। খর¯্রােতা রক্তিনদীসহ জেলার প্রধান নদী সুরমার সঙ্গেও সংযোগ রয়েছে। ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই নদীটির প্রায় ১৭ কিলোমিটার খনন করতে গত বছর ডিপিপি পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এর আগে বিএডিসি এই নদীটি খনন করার কথা থাকলেও প্রকল্পটি ফেইল করে পাউবোকে লিখিতভাবে খননের জন্য জানিয়েছে। গত বছর পাউবো সরেজমিন জিরাগ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে পরিদর্শন করে ডিপিপিটি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ডিপিপি অনুমোদন হলেই খনন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয় অভিজ্ঞ কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খরচার হাওর ও জোয়ালভাঙ্গা হাওরটির ফসল উৎপাদনের প্রাণ ছিল জিরাগ নদী। বর্ষা মওসুমে এক সময় বৃষ্টি ও ঢলের পানি ধারণ করে হাওরের ফসলকে সুরক্ষা দিতো নদীটি। তাছাড়া শুষ্ক মওসুমে নদীর পানি চাষাবাদে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বৈশাখী মওসুমে পানি ধারণের ব্যবস্থা না থাকায় দুটি হাওরের ফসল অরক্ষিত থাকে। একইভাবে চাষাবাদের মওসুমে সেচ সংকটসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়। যে কারণে কৃষকরা এই নদীটি খননের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সনে সুনামগঞ্জ বিএডিসি খননের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প গ্রহণ ও পাসও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজটি না করেই সরে আসে বিএডিসি। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি খননের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
জিরাক নদী এলাকার বাসিন্দা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, এই নদীটি এক সময় খর¯্রােতা ছিল। খরচার হাওর ও জোয়ালভাঙ্গা হাওরের ফসল উৎপাদনে ভূমিকা ছিল নদীটির। কিন্তু প্রায় ২০ বছর আগেই নদীটি হারিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই নদীর কোনো স্মৃতি নেই। এই নদীটি খনন করা হলে উপকৃত হবে দুটি হাওরের কয়েক লাখ কৃষক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, জিরাক নদী খননের জন্য ডিপিপি তৈরি করে আমরা গত বছর মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এই নদীটি বিএডিসি খননের উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে এসেছে। এখন আমরা দুটি হাওরের ফসল উৎপাদন সুবিধার জন্য খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ডিপিপি অনুমোদন হলে শীঘ্রই নদী খনন শুরু হবে।