1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আজাদ হত্যাকাণ্ড ॥ দুর্বৃত্তদের রুখে দিন

  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯

বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনীতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের সমাজটা সত্যিকার অর্থে কিংবা আক্ষরিক অর্থেই পরিপূর্ণভাবে দুর্বৃত্ত হয়ে উঠেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সে তুলনায় সুনামগঞ্জকে শান্তশিষ্ট সুবোধ বালক বলা যায়। সুনামগঞ্জে অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না কিংবা সমাজ পরিসরে অনর্থ ঘটে না এমনও নয়। কালেভদ্রে দুয়েকটা অঘটন তো ঘটতেই পারে। কোনও একদিন হয়তোবা ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলের উপর ‘ভুল ক্রমে’ চিহ্নিত সন্ত্রাসী হামলে পড়ে একটু চোটপাট দেখাতেই পারে এবং পরেপরেই ভুল বুঝাবুঝির কথা স্বীকারও করে। এরকম প্রায়ই হয় এবং তাতে করে সুনামগঞ্জের শান্তশিষ্ট শান্তিপ্রিয় রূপটা একেবারে বদলে যায় না। কিন্তু ইদানিং টের পাওয়া যাচ্ছে যে, অবস্থা ক্রমে বেগতিক হয়ে উঠছে এবং মনে হচ্ছে তলে তলে অবস্থা পাল্টে গিয়ে গুরুতর ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠ লিখেছে, ২০১৮ সালে দেখার হাওরের ৬টি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ করেন কৃষক নেতা আজাদ মিয়া। আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় ওই প্রকল্পগুলোর সঙ্গে জড়িতরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল।
ইদানিং দুর্বৃত্তায়িত দেশ, সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির কথা বিদগ্ধজনের আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হয়ে পড়েছে এবং এসব নিয়ে প্রায়সই পত্রপত্রিকা ও সভাসমিতিতে পর্যালোচনা পরিলক্ষিত হয়। আজাদ হত্যার বিষয়টিকে বিবেচনা করলে এই নৃশংস ঘটনার একটি পথপরিক্রমা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রথমত হাওরাঞ্চলে সরকার হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করেছেন। দুর্নীতিবাজরা এই টাকা মেরে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছে এবং পাউবো’র কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে প্রয়োজনীয় বাঁধের স্থলে অপ্রয়োজনীয় বাঁধের প্রস্তাব সরকার বরাবরে পেশ করে টাকা বরাদ্দ করিয়েছে। দুর্নীতিবাজ চক্রের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আজাদ মিয়া। দুর্বৃত্তরা চিরাচরিত নিয়মানুসারে তাদের পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেছে মাত্র। সাধারণ মানুষ মনে করেন, আজাদহত্যা ঘটনার পেছনে অন্য কোন গল্প নেই। গল্প সেই একটাই, সম্পদ আহরণের পথে বাধা অপসারণ। এই বাধা অপসারণ করতে যুগে যুগে মানুষকে দুর্বৃত্তচক্রের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি আর্থনীতিক কার্যক্রমের প্রতিটি খাতে ও স্তরে এই দুর্বৃত্তরা প্রতিনিয়ত সক্রিয় আছে এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আমলাতান্ত্রিকতার একটি অংশ তাদের মদদ যোগাচ্ছে, যেমন এখানে পাউবো দুর্নীতিবাজদের টাকা মারার মওকা করে দিতে অপ্রয়োজনীয় বাঁধের প্রস্তাব করেছে সরকারের কাছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবাদী মানুষ এই সব চক্রের শিকারে পরিণত হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। বলা বাহুল্য, আজাদহত্যা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। এক অর্থে তাঁর মৃত্যু একটি বৃহৎ অশুভ চক্রের বিশাল কর্মপরিকল্পনার বা অঘটনের ভেতরে নিতান্ত ক্ষদ্র পরিকল্পনা বা একটি ক্ষুদ্র অঘটন। এই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মহাত্মা গান্ধি কিংবা শেখ মুজিবকেও প্রাণ দিতে হয়েছে এবং যে-সব মানুষেরা প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এই অশুভচক্রের হাতে দেশে দেশে এখনও প্রতিবাদীদেরকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এই মূর্তিমান অশুভ কর্মপরিকল্পনাকে দমন করতে না পারলে এমনভাবে আজাদ মিয়ার মতো প্রতিবাদীদেরকে নিহত হতেই হবে।
আমরা আর বিশেষ কীছু বলতে চাই না। কেবল বলি, মুক্তবাজার অর্থনীতির জমিনে বেড়ে উঠা দুর্বৃত্ত যারা হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের নামে টাকা মারার তালে ছিল বা আছে এবং এই টাকা মারার পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পিতভাবে তৈরি করেছে, অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করেছে এবং তার বিপরীতে আজাদ মিয়াকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং শেষ পর্যন্ত আজাদের কার্যক্রমকে ঠেকাতে আজাদকে পরিকল্পিত আক্রমণ করেছে এবং আজাদকে মেরে ফেলেছেÑ তাঁদের বিচার চাই, কোনও টালবাহানা চাই না, বিশেষ করে এই দুর্বৃত্তদেরকে বাঁচাতে কোনও রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতা চাই না। জনবান্ধব সরকারকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কথা একটাই : দুর্বৃত্তদের রুখে দিতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com