1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সমাজে জাগরণ তৈরি হচ্ছে, হাওর দুর্নীতির সাথে জড়িতরা পার পাবে না

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯

এই ক’দিনে আকাশের রঙ যখন তখন বদলাচ্ছে। কখন কী হবে বলা যাচ্ছে না। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ফাল্গুনের শুরু থেকে আবহাওয়ার মেজাজমর্জির কোনও ঠিকঠিকানা থাকে না কোনও সময়ই। হঠাৎ করেই হামলে পড়তে পারে মুষলধারে বৃষ্টি, কিংবা বজ্রপাত, এমনকি কালবোশেখি (ঘূর্ণিঝড়)। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এইসব প্রাকৃতিক ঘটনার প্রত্যেকটা কৃষকের দুশ্চিন্তাকে বাড়ায় এবং কৃষকের এই দুশ্চিন্তা ফসল ঘরে তোলার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বজায় থাকে। এবার যতদিন যাচ্ছে হাওরের কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তার অবশ্য একটা বাড়তি কারণ আছে। এই কারণটি আর কীছুই নয়, সেটি পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট কাজ হলো, হাওরের বাঁধগুলো নির্মাণ, মেরামত করে বোরো ফসল রক্ষা করা। কিন্তু বলতে গেলে প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠানটি এবং বাঁধের কাজে নিয়োজিত অন্যান্যরা তাদের কাজে গাফিলতির সেরা দৃষ্টান্ত উপস্থিত করে জেলার কৃষকের ও পর্যবেক্ষকমহলের সামনে। প্রকৃতপ্রস্তাবে যে-বার তারা গাফিলতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পায় সে-রক্ষা পাওয়াটাও প্রকৃতির বদান্যতায় সংঘটিত হয়, হয় তো সে-বার দৈবাৎ ঝড়-বৃষ্টি কম হয় এবং প্রকারান্তরে পাহাড়ি ঢলের মাত্রা ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য হুমকি হয়ে উঠে না।
সাধারণত কাজের প্রাক্কলনটাই করা হয় বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ সৃষ্টি করার অভিপ্রায়ে, তার সঙ্গে যুক্ত হয় কাজ বিলম্বে সম্পন্ন করার প্রবণতা এবং আংশিক কাজ করে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে টাকা উত্তোলনে সফলতা অর্জন। ফসলরক্ষা বাঁধ পাউবো’র দুর্নীতিবাজদের দু’ধরনের আয় অর্জনে সাফল্য দিয়ে থাকে। এই দু’টি সাফল্য হলো : প্রাক্কলনের হিসেবে প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় নির্ধারণ করা এবং আংশিক কাজকে পূর্ণ কাজ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে পূর্ণ কাজের টাকা পকেটস্থ করা। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এমন যে, এতে প্রথমত ‘হিসেবে বাড়তি ধরা’ এবং দ্বিতীয়ত ‘খরচ না করে খরচের টাকা আদায়’। এই দু’ভাবেই পাউবো’র দুর্নীতিবাজরা বাড়তি টাকা অর্জন করে। এই পদ্ধতি চলে আসছে ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরির প্রচলন যে-দিন থেকে শুরু হয়েছে সে-দিন থেকেই।
২০১৭ সালের ফসলডুবির ভয়ংকরতা ছিল শতাব্দী সময়ের মধ্যে বিরল ঘটনা। সে বছর কৃষক মাঠ থেকে এক মুইট ধানও কেটে তোলতে পারেনি এবং এই ভয়াবহতা কৃষকের চোখ খোলে দেয়। কৃষক এতো দিন পর পাউবো’র প্রতারণা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এবং তারা প্রতিরোধ তোলতে সক্রিয় হয়ে উঠে ও হাওরের পাড়ে পাড়ে গড়ে উঠে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’-এর মতো প্রতিবাদী সংগঠন।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল “ফসলরক্ষা বাঁধ ॥ পাউবো বলছে মাটির কাজ শেষ!”। পাউবো’র এই ঘোষণা আক্ষরিক অর্থেই একটি প্রতারণা। কাজ শেষ না হওয়ার আগেই শেষ হওয়া ঘোষণা, মরবার আগেই মেরে ফেলার মতো। এই প্রতারণা বা এই রকম প্রতারণা, যাকে দুর্নীতি ভিন্ন অন্য কোনও অভিধা দেওয়া যায় না, পাউবো প্রকৃতপক্ষে নির্বিঘেœ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে জনকল্যাণে নিয়োজিত করে রেখেছে, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃতপ্রস্তাবে জনকল্যাণের ধারে কাছেও থাকছে না বরং উল্টো জনগণের সমূহ অকল্যাণ করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে প্রতিনিয়ত এবং প্রকারান্তরে রাষ্ট্রকে জনকল্যাণধর্মী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে দিচ্ছে না এবং কেউ কীছু বলছে না কিংবা বা প্রতিবাদ উঠছে না বিধায় এটা একটি নিয়ম বা এক ধরনের বৈধতা পেয়ে গেছে। পাউবো নিজের এই রকম প্রতারণা বা দুর্নীতিকে বৈধ কাজ বলেই ভাবছে। কিন্তু এই ভাবনা কোনও যুক্তিতেই ঠিক নয়। এবার ভাবনা পাল্টাবার কিংবা নিজেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাহার করার কিংবা নিজের অবলুপ্তি ঘোষণা করার সময় এসেছে। লোকসমাজে জাগরণ তৈরি হচ্ছে, পাউবো পার পেয়ে যাবে না কীছুতেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com