সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জামায়াত ইসলামী ২০-দলীয় জোট ছেড়ে না গেলে দলটিকে ছাড়বে না বিএনপি। তবে সরাসরি যুদ্ধাপরাধী এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলবে। এ ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোটকে অটুট রেখে বিএনপি অন্য জোটসঙ্গী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সম্প্রসারণের চিন্তা করছে।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলছেন, জামায়াতের কোনো নিবন্ধন নেই। তার পরও যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাদের এড়িয়ে চলবে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যে দলগুলো এখনো ২০-দলীয় জোটের বাইরে রয়েছে বিশেষ করে আট বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম জোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। ঐক্যফ্রন্টের উদ্দেশ্যেই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে দেশে স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই আইনের শাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মন্তব্য গত ৩০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জালিয়াতির যে নির্বাচন হয়েছে তা নজিরবিহীন। তারা বলছেন, এ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। চলতি মাসে তারা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপিও দিয়েছে বলে জানান।
গণতান্ত্রিক বাম জোট ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারাও চলমান বাস্তবতায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘ভোট ডাকাতি, জবরদখল ও অনিয়মের নানা চিত্র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আট বাম দলের জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট ‘চুরি বা জালিয়াতি’ নয়, ‘প্রকাশ্য ভোট ডাকাতি’ করতে ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীনরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘সহায়তা’ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের সাধারণ সস্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, আমরা সবাইকে চাই। দেশে একটা সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে চাই।
এমন বাস্তবতার মধ্যে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলবেন কিনা এমন প্রশ্নে গত শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, এটি বলা যেতে পারে।
ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের মধ্যে নতুন করে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ইস্যু চাপা পড়ে জামায়াত ইস্যু সামনে চলে এসেছে।
জামায়াত প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, জামায়াত ইস্যুটা নিয়ে উনাকে এমনভাবে বিরক্ত করা হয়েছে…। জামায়াতকে নেওয়ার বিষয়ে ড. কামাল হোসেন পরামর্শ দিতে পারেন? যিনি সংবিধান রচনা করেছেন; সেই ব্যক্তিকে পদে পদে এভাবে নাজেহাল করা, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের কারণে তার গাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। আমাদের কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি মনে হয়? দেখতে হবে যুদ্ধাপরাধী কোনো ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে আছে কিনা। রাজাকার তো নৌকায় উঠেছে। আমাদের সঙ্গে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।
জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, জামায়াত ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল, তারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চায়। বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে রাজনীতি করে। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শ ভিন্ন। তবে আমরা যদি জামায়াতকে ছেড়ে দিই, তা হলে আওয়ামী লীগ যে তাদের টেনে নেবে না সেই নিশ্চিয়তা কে দিবে? দিতে পারবে না। আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই জামায়াতের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের একটা ভোটব্যাংক আছে এটাই মূল কারণ। বিএনপি-জামায়াত বিচ্ছিন্নের ইস্যুটা সামনে আনার অর্থ হচ্ছে বিএনপি জোটের ভোটব্যাংক নষ্ট করা। – আমাদের সময়