1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মঈনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : নদী গর্ভে চলে গেছে স্কুলের সামনের অংশ, পাঠদান বন্ধ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

শামস শামীম, মঈনপুর থেকে ফিরে ::
সুরমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঈনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত এক সপ্তাহে অন্তত ২০ ফুট স্থান ভেঙ্গে একেবারে স্কুল থেকে তিন ফুট দূরে এসে থেমেছে নদী। স্কুলের বারান্দার পিলারের কাছে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আতঙ্কিত স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠদান বন্ধ রেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের সব প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ফ্লাড শেল্টারে স্থানান্তর করেছেন। যে কোন মূহুর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে ৬৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে আতঙ্কিত স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্ধারিত ভোটকেন্দ্র হিসেবে ভোটগ্রহণ এবং আসন্ন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন গত মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাযায়, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের দফতরি দিয়ে স্কুলের মূল্যবান জিনিষপত্র পাশের একটি ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ওই ফ্লাড সেন্টারে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সকালেই ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ফোন করে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ এলাকার লোকজন। কিছুক্ষণ পরেই সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাছাড়া এই বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র থাকায় জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষা নিকটে থাকায়ও স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠদান ও পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে ১৯৫৪ সনে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সনে বর্তমান টিনশেডের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের সামনে এক সময় বিরাট খেলার মাঠ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনের ফলে মাঠটি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে নদী গর্ভে। এক সপ্তাহ আগে বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় ২৫-৩০ ফুট জমি ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহেই সেগুলো ভেঙ্গে একেবারে স্কুলের বারান্দা থেকে ৩-৪ ফুট দূরে এসে গেছে। সামনের অংশ থেকে ৩-৪ ফুট দূরেই ভাঙ্গন ষ্পষ্ট। বিদ্যালয়ের বারান্দার পিলারের পাশেই বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের উত্তর-দক্ষিণের সামনের অংশ ভেঙ্গে নিচে নেমে গেছে। এই ঝূকির কারণে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। গতকাল সকালে এসে স্কুলের শিক্ষকরা ভাঙ্গন একেবারে কাছে চলে আসায় আতঙ্কিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মাহমুদ আলী বলে, আমার মা বাফ আমারে এখন ইস্কুলে আইতে দেইননা। তারা খইন ইস্কুল যে কোন বালা ভাঙ্গি যিব। আমরাও ডর করে’। ( আমার বাবা মা এখন স্কুলে আসতে দেননা। তারা বলেন, স্কুল যে কোন সময় ভেঙ্গে যাবে। আমাদের ভয় করে)।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাহাতুন নেছা বলে, সকাইলে আইয়া আমরা দেখি সামনের অংশ নদীত ভাইঙ্গা পরের। পরে আমার ম্যাডামরা আইয়া সব জিনিষ আমরারে দিয়রা সরাইছন। (সকালে এসে দেখি স্কুলের সামনের অংশ ভাংছে। পরে ম্যাডামগণ এসে আমাদের দিয়ে বিদ্যালয়ের সব জিনিষ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয় যুবক ও এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রুবেল বলেন, আমরা ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলেছি। প্রতি বছর টুর্নামেন্ট হতো। কিন্ত গত কয়েক বছরে মাঠ নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন স্কুলটিও গিলতে বসেছে সর্বনাশা সুরমা নদী। তিনি বলেন, শুধু স্কুলই নয় সুরমার গর্ভে চলে যাচ্ছে মঈনপুর গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। তিনি ভাঙ্গন ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইলা রাণী পাল বলেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যালয়ের সামনে ২৫-৩০ ফুট জমি ছিল। সেগুলো ভেঙ্গে এখন ৩-৪ ফুট রয়েছে। যে কোন মুহুর্তেই নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে আমাদের বিদ্যালয়টি। তিনি বলেন, সকালে এসেই আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ স্কুলে এসে আমাদেরকে পার্শবর্তী ফ্লাড সেন্টারে সব জিনিষ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশন দিয়েছেন।
সদর উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সোলেমান মিয়া বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানেই স্কুলের সামনের অংশ ভেঙ্গে গেছে। যে টুকু বাকি আছে যে কোন সময়ই ভেঙ্গে যেতে পারে। আমরা তাদেরকে বিদ্যালয়ের সব জিনিষ সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। বিদ্যালয়ের টিন খুলে পাশের কোথাও খোলা জায়গায় অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানাব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, আমরা মঙ্গলবাার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গন রোধে জরুরি কাজ করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com