গত মঙ্গলবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ শীর্ষক মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব’ হয়ে গেলো। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। বুঝাই যায়, উন্নয়নের চাকা অব্যাহত আছে এবং সম্ভবত বর্তমানে যারা রাষ্ট্ররাজনীতির পরিচালকের ভূমিকায় আছেন, তারা তাদের সে-ভূমিকা থেকে চ্যুত না হলে দেশের আর্থনীতিক উন্নয়নের চাকা অদূর ভবিষ্যতে আরও বেগবান হবে। অতি পরিতাপের বিষয় যে, অতীতে রাষ্ট্ররাজনীতির পরিচালকদের পক্ষ থেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেশের উন্নয়নের চাকাকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে । একসময়, বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র মালয়েশিয়া যেখানে উত্তরোত্তর উন্নতি করেছে সেখানে বাংলাদেশ কেবল পিছিয়ে পড়েনি পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতিতে সেরা হয়েছে। এই পশ্চাৎপদতা স্পষ্টত প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশের এক শ্রেণির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রক রাজনীতিকরা এখনও দেশের উন্নতি চান না, বরং বিদেশি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির দালালি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের মতলবে রাজনীতি করেন ও ক্ষমতায় যেতে চান।
স্বাধীনতার বছর তিনেক পর থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিক শক্তি হত্যাষড়যন্ত্রের কৌশল প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল করে এবং প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতিকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। যে-কারণে মালয়েশিয়া বর্তমানে আর্থনীতিক উন্নতির যে-পর্যায়ে আছে সে-পর্যায়ে বাংলাদেশ দীর্ঘ সাতচল্লিশ বছরেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি, অর্থাৎ এই দেশের জনশক্তিকে উৎপাদনশক্তিতে পরিণত না করে প্রকারান্তরে অথর্ব করে রেখে কেবল শোষণ ও শাসন করা হয়েছে এবং দেশের ভেতরে কোনও বিনিয়োগ না করে বিদেশে সম্পদ পাচার করা হয়েছে। অপরদিকে দেশের ভেতরে মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিস্তারসহ চোরাচালান, মাদকবাণিজ্যসহ খুনখারাপি বৃদ্ধি পেয়েছে দিনে দিনে। সাতিশয় পরিতাপের বিষয় যে, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত অগণিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আর্টিজানযজ্ঞ নামক সান্ত্রাসী কর্মকা-ও শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করতে বাধ্য হয়েছে।
যে-কোনও দেশের উন্নয়নের একটি পথ হলো পুঁজিবাদী পথ। এই পুঁজিবাদী পথটিও বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে দেওয়া হয়নি, বরং পুঁজিবাদী রীতিতে বাংলাদেশকে শোষণ করে ছিবড়ে বানিয়ে দেওয়ার পথ অনুসরণ করা হয়েছে এবং প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অর্থহীন করে তোলে একাত্তরের পরাজিত রাজনীতিক শক্তির উত্থান ও জবরদখল নিশ্চিত করা হয়েছে সামাজিক, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে।
বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় পরিস্থিতি পাল্টেছে বটে, কিন্তু জানা কথা বর্তমানে অব্যাহত আর্থনীতিক উন্নয়ন দেশের উন্নয়নকে যে-ভাবে নিশ্চিত করবে তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পদের বৈষম্যের ব্যবধানকেও বাড়িয়ে তুলবে, যদি না একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় সে-ব্যবধান বৃদ্ধির মাত্রাকে কমিয়ে আনা না হয়।