এ দেশে সব কীছুই ঝুলে থাকে। এখানে জন্ম ও মৃত্যু ভিন্ন আর যাবতীয় অপ্রকৃত কিংবা মানবনিয়ন্ত্রিত যত কীছু, সকল কাজের একটাই নিয়তি ঝুলে থাকা, আটকে থাকা কিংবা কালক্ষেপণ। এখানে বিচার কাজ ঝুলে থাকে, ঝুলে থাকে দায়মুক্তি বিল পাশ ব্যতীত যাবতীয় অতীব প্রয়োজনীয় আইন প্রবর্তনের কাজ। এ দেশের আদর্শমন্ত্র একটাই, হন্তদন্ত করা মানেই শয়তানের রাস্তায় চলা। যে-কোনও পরিবর্তন এখানে হয় খুব ধীরে। এখানে অবনতি হয় শশব্যস্তে, কিন্তু উন্নতি হয় কচ্ছপগতিতে। এই দেশের এই পুরনো নিয়মটা যাঁরা ভালো করে জানেন তাঁদের মধ্যে ঠিকাদাররা বিশেষভাবে অগ্রগণ্য। তাঁরা কোনও কাজই শুরু করে শেষ করতে আর একেবারেই সচেষ্ট হন না বা আগ্রহ প্রকশ করেন না এবং ইচ্ছে করেই, যে-কোনও একটা অহৈতুকী অজুহাতে, যদিও তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা করে থাকেন কাজের বরাবরে বরাদ্দ করা টাকা পুরোটাই উত্তোলনের পর, আগে নয়।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন থেকে অবগত হওয়া যায় যে, দুই বছর যাবৎ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ববীরগাঁও ইউনিয়নের পাগলা বীরগাঁও সড়কের পাশে পাখিমারা হাওরের পাড়ে বীরগাঁও খালপাড় কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ শুরু হয়ে আর শেষ হচ্ছে না। কাজটি শুরু হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে এবং এখন কাজ করবে কে, ঠিকাদারের দেখাই মিলছে না। স্থানীয় লোকজন কর্তৃপক্ষ বরাবরে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত করার পরও কোনও ফলোদয় হচ্ছে না। ক্লিনিক নির্মাণের কাজ বরাবরের মতন যেমন ঝুলে ছিল তেমনি ঝুলেই আছে।
দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। সেতু, সড়ক, ভবন ইত্যাদি ভৌত অবকাঠোমো যথাযথ পরিমাণে এবং যথাসময়ে নির্মিত না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। উন্নয়নের স্বার্থেই যে-কোনও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ যথাসম্ভব দ্রুত সম্পন্ন করা যেমন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি সর্বোত্তম কাজ, তেমনি অপরদিকে সেটা দেশপ্রেমিক কাজেরও অন্তর্ভুক্ত। নির্মাণ কাজের দ্রুততাকে ধীর করে দেওয়ার একটাই অর্থ হতে পারে, যাকে বলা চলে, দেশের উন্নয়নের প্রতি ইচ্ছাকৃত অবহেলা। দেশের প্রতি এই অবহেলাকে কীছুতেই বরদাস্ত করা উচিৎ নয়। যে-কোনও কারণে যে-কোনও দেশের উন্নয়নের কাজ ব্যর্থ হলে বা স্থবির হয়ে পড়লে দেশের উন্নয়ন অনুন্নয়নে পর্যবশিত হতে বাধ্য। যে-কেউ ইচ্ছে করে কোনও কাজ বিলম্বিত করলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা দেশদ্রোহিতা বলে গণ্য হওয়াই সমীচীন। এমতাবস্থায় বীরগাঁও খালপাড় কমিউনিটি ক্লিনিকটির অসমাপ্ত কাজ অচিরেই শুরু করতে হবে।