দেশের ভেতরে বিভিন্ন রাজনীতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের হরেক রকমের কর্মতৎপরতা প্রতিনিয়ত প্রতিপন্ন করছে যে, দেশের ভেতেরে আগের যে-কোনও সময়ের তুলনায় মানুষের বাকস্বাধীনতা সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠছে। কারও কারও এমন মনে হতেই পারে। একজন সাংবাদিক একজন মাদ্রসা শিক্ষকের ব্যভিচার সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, ফালতু ঝামলা হওয়ার অজুহাতে, সেটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্তের শরণাগত হয়েছেন। প্রশ্ন হলো এই সংবাদিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতোটুকু বিঘিœত হয়েছে? একজনের সম্মান রক্ষার্থে সত্য প্রকাশের এই কুণ্ঠা, অন্যজনের অর্থাৎ ধর্ষিতার জীবনটাই বরবাদ করে দেওয়ার ক্ষমাহীন অন্যায় অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়ার নামান্তর নয় কি?
মাঝেমধ্যে দেশে এমনসব ঘটনা ঘটে মনে হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মসকরা করা হচ্ছে। ডিজিটাল আইন পাশ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে কী একটা করার জন্য এক তরুণীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি অবগত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের স্বয়ং থানা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তরুণীকে মামলার ঝামেলা থেকে রক্ষা করেছেন এবং প্রকারান্তরে প্রমাণ করেছেন ডিজিটাল আইনের এটি একটি অপব্যবহারের উদাহরণ। অপব্যবহার করা সম্ভব এমন কোনও আইনের প্রবর্তন দেশের জন্য বৃহত্তর কোনও মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না, প্রকারান্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে মাত্র। কিংবা এমন কোনও আইন প্রবর্তন করা সঙ্গত নয়, যে আইন প্রতিহিংসা প্রবণ হয়ে অন্যের উপর প্রয়োগ করা সম্ভব। এ কারণে মানবাধিকার রক্ষার্থে অপব্যবহারের সম্ভাবণাপূর্ণ আইন সংশোধনের দাবি রাখে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি রাজনীতিক দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সভা ও ডিজিটাল আইনের সংশোধনের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা নেই বটে, কিন্তু বুঝা যায় দেশে সাধারণ মানুষেরা মনে করছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিরোধর মুখে পড়ার অশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সেটার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই আশঙ্কা নিয়ে কালাতিপাত করার কোনও সার্থকতা আছে, এমন মনে করার কেনও কারণ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাই সমস্যাটিকে জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে নিরসনের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।