মাহমুদুর রহমান তারেক ::
গত কয়েক বছরে সুনামগঞ্জের নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু অত্যধিক নৌকা ভাড়ার কারণে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। নৌকার মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট করে পর্যটকদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে তাহিরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটের সৌন্দর্যের কথা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। নয়নাভিরাম এই সৌন্দর্য পর্যকটদের আগ্রহী করে তোলে। প্রতিদিনই টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ঘুরতে আসছেন পর্যটকরা। তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাকমা ছড়া প্রতিদিন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকছে। এই পর্যটকদের অধিকাংশই বর্ষা মৌসুমে ঘুরতে আসছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক তাহিরপুরে ঘুরতে এসেছেন। সেপ্টেম্বর মাসে পানি কমার শেষ মুহূর্তে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার পর্যটকের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে এসে অত্যধিক নৌকা ভাড়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকরা। পযর্টকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন নৌকার মালিক ও চালকদের কাছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে এসে নৌকা মালিক ও চালকদের কাছে ভাড়ার কারণে নাজেহাল হচ্ছেন। নৌকার মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট করে পর্যটকদের কাছে ভাড়া আদায় করছেন। কেরোসিন, ডিজেলের দাম গত কয়েক বছর ধরে না বাড়লে নৌকার ভাড়া বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বছর দু’য়েক আগেও যেখানে প্রতিদিনের নৌকা ভাড়া ২০০০-২৫০০ ছিল সেখানে বছর খানেক ধরে ৬০০০-৭০০০ হাজার টাকা আদায় হচ্ছে। কোন কোন দিন আরো বেশি টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নূরে আলম বলেন, কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে ঘুরতে এসেছিলাম টাঙ্গুয়ার হাওরে। প্রতিদিন ঘণ্টাকয়েক নৌকা ভাড়া দিতে হয়েছে ৬ হাজার টাকা, আবার রাতে থাকার জন্য বাড়তি টাকা দাবি করে নৌকার চালক। এত দূর থেকে এসেছি, ফিরে যেতে তো পারবো না, বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছে। এত বেশি টাকা নৌকা ভাড়া দেশের অন্য কোন পর্যটন স্পটে নেই।
বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারি ফোরাম সুনামগঞ্জের সভাপতি মো. মোদাচ্ছের আলম বলেন, তেলের দাম বাড়েনি কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরে ঠিকই নৌকা ভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে অধিক ভাড়ার কারণে পর্যটকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন, না হলে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট সমূহ থেকে পর্যটকার মুখ ফিরিয়ে নেবে।
টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, নৌকার মালিক-চলকদের কাছে পর্যটকরা অনেকটাই জিম্মি। তারা তাদের মনমত ভাড়া আদায় করছে। এতে করে সম্ভাবনাময় সুনামগঞ্জের পর্যটনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নৌকা ভাড়ার ব্যাপারে নৌকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, হাওরে ঘুরতে এসে পর্যটকরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সে বিষয়টি দেখবে প্রশাসন। কোনভাবেই অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া আদায় করা যাবে না। নৌকা ভাড়ার তালিকা আমরা কয়েকটি স্পটে টাঙিয়ে দেব পর্যটকদের সুবিধার্তে।