বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে থাকা মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন দেশে একটা খাদ্যনিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে উঠেছে, যা সহজে ভেঙে পড়বে না এবং মানুষের অবস্থা এমন নয় যে, অনাহারে মৃত্যুবরণ করবে, যদিও বেকারত্বের ব্যাপকতা আছে। কিন্তু এরকম একটি অবস্থার মধ্যে মানুষের মধ্যে ধনবৈষম্য উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে এবং বোধ করি অদূর ভবিষ্যতে তা বাড়তেই থাকবে এবং এর ব্যাপকতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ জানে না, যদি দেশের উন্নয়ন যে-পথ ধরে এগিয়ে চলেছে সে-পথ ধরেই এগিয়ে চলে। বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের অভিযাত্রা বিশ্ব পরিসরে প্রসংশিত হয়েছে এবং একটি বিশেষ মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এখন এখানে মাথাপিছু আয় প্রায় ষোলশ ডলারের মতো। বাংলাদেশের মতো পশ্চাৎপদ আর্থব্যবস্থার একটি দেশের পক্ষে হাজারটা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে এই উন্নতি অর্জন চাট্টিখানি কথা নয়। মনে একধরনের স্বস্তি মেলে। দেশ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু মনের স্বস্তি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায় তখনই যখন সংবাদপত্রে পড়তে হয়, “প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান লিজ …। লিজের শর্ত ভঙ্গ করে চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে তোলেন হাউজিং প্রকল্প ও নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, নিজ ও স্ত্রীর নামে মেডিকেল হাসপাতাল …।” বলা বাহুল্য, তারাপুর চা বাগানটি হাজার কোটি টাকার একটি সম্পত্তি।
বাংলাদেশ যখন উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে, তখন উক্ত লিজ নেওয়াদের মতো কোনও কোনও স্বার্থন্বেষী মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ। এক-দু’জনকে আটক করা হচ্ছে, বিচারে শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই আছে কারাগারের বাইরে এবং সর্বাবস্থায় তারা কোনও না কোনও রাজনীতিক স্নেহাদরে পরিপুুষ্ট হয়ে থাকে। এরা সাধারণ মানুষের সম্পদ ছলেবলে-কলেকৌশলে ছিনিয়ে নিচ্ছে, সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রকারান্তরে উন্নতি হচ্ছে কতিপয় মানুষের। ধনবৈষম্য বাড়ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ফলে সামজে প্রবল হয়ে উঠছে ভারসাম্যহীনতা, বাড়ছে সামাজিক-রাজনীতিক অস্থিরতা। এই অবস্থাকে সাধারণ মানুষের মঙ্গলজনক অর্থনীতি বলা যায় না। আমাদের চাই একটা জনকল্যাণধর্মী অর্থনীতি। যে-অর্থনীতিতে রাগীব আলীর মতো রাঘব-বোয়ালদের সৃষ্টি হবে না। রাষ্ট্র-সমাজ-দেশ নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকদের সে-কথা এখনই ভেবে দেখতে হবে এবং নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা ও আর্থনীতিক পরিকল্পনা।