স্টাফ রিপোর্টার ::
বিএনপি নেতা রাহেল মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের নোয়াখালি বাজারে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাস ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করায় গত শুক্রবার থেকে আঞ্চলিক সড়কে পরিবহন ধর্মঘট পালন করে সুনামগঞ্জ জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত দুই দিন দিরাই-মদনপুর আঞ্চলিক সড়কে ধর্মঘটের পর রোববার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ জেলাব্যাপী কঠোর ধর্মঘট পালন করে শ্রমিক-মালিকরা। তারা বাসে অগ্নিসংযোগকারী বিক্ষুব্ধদের গ্রেফতার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে জেলার সকল সড়কে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন। পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বাস, মিনিবাস, সিএনজি, লেগুনা এমনকি মোটর সাইকেল চলাচলেও বাধা দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম যাত্রী দুর্ভোগ লক্ষ করা গেছে। পরিবহন শ্রমিকদের সকল পরিবহন চলাচলে বাধা প্রদানে যাত্রী ও অন্যান্য পরিবহনের চালকরাও ছিলেন ক্ষুব্ধ।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সুনামগঞ্জ নতুন বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় দূরপাল্লার বাসসহ অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচলকারী সকল বাস সারি সারি করে রাখা হয়েছে। সড়কে চেয়ার-টোল নিয়ে শ্রমিকরা বসে আছেন। সবধরনের গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছেন তারা। সংঘবদ্ধ শ্রমিকরা এসময় সিএনজি, অটোরিকসা, লেগুনা এমনকি মোটর সাইকেল থেকেও যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালকের চাবি কেড়ে নিয়ে পরিবহনগুলো স্টেশনের ভিতরে নিয়ে রাখেন। কঠোর অবরোধের কারণে তাই সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল যানবাহনগুলো।
এসময় বাসস্টেশনে দেখা যায় দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা রাস্তায় দুঃসহ গরমে অপেক্ষা করছেন। বিশেষ করে বয়স্ক নারী পুরুষ, অসুস্থ মানুষ, শিশুরা গরমে খোলা আকাশের নিচে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। রাস্তার পাশে কোন স্থাপনা না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা অপেক্ষা করছিলেন। কোন যাত্রী এসময় লেগুনা, সিএনজি বা মোটর সাইকেলে যেতে চাইলে তাদেরকে বাধা দেন শ্রমিকরা। এসময় দেখা গেছে ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, মোটর সাইকেল, সিএনজি ও লেগুনাসহ অন্তত ৩০টি যানবাহন আটকে রাখা হয়েছে স্টেশনের ভিতরে।
মোটর সাইকেল চালক শফিকুল একজন রোগীর স্বজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পথে তার মোটর সাইকেলটি আটকে দেয় শ্রমিকরা। এসময় বাধা দিলে এই প্রতিবেদকের সামনেই তাকে চড়-থাপ্পর দেয় একজন শ্রমিক। পরে তার সাইকেলটিও আটকে রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু বাসস্টেশনই নয় পাগলা, নীলপুর, মদনপুর পয়েন্ট, ডাবর পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানেই পরিবহন শ্রমিকরা সবধরনের যান চলাচলে বাধা দিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে তাদের বাকবিত-াও হয়েছে। এময় নতুন বাসস্টেশনে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে মোটর সাইকেলে আসা ১০-১৫ জন পর্যটকও বিপাকে পড়েন। তারা সিলেটে যেতে চাইলে মোটর সাইকেল চালকদের নামিয়ে দিতে বলেন শ্রমিকরা।
পাগলাবাজার যাওয়ার জন্য সুভাষ পাল নামের এক তরুণ তার অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে নিয়ে সিএনজিতে রওয়ানা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসস্টেশনে তাদের নামিয়ে দেয় শ্রমিকরা। কেড়ে নেয়া হয় সিএনজি’র চাবি। তিনি তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী’র দোহাই দিয়েও রেহাই পাননি। সুভাষ পাল বলেন, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্বা। তাকে দেখেও নামিয়ে দিয়েছে সিএনজি থেকে। এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। তার কষ্ট হচ্ছে গরমে। অসুস্থ বোধ করছেন।
বিশ্বম্ভরপুরের যাত্রী সিদ্দিকুর রহমান জরুরি কাজে সিলেট যাওয়ার জন্য মোটর সাইকেলে এসেছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চাবি নিয়ে যায় শ্রমিকরা। তিনি বলেন, বাস চালক ও বাস মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে একটি দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছেন। এখন সবগুলো যানবাহন বন্ধ করে ধর্মঘট করা বেআইনি ও অন্যায়। এটা নৈরাজ্য ও অমানবিক। এদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সংগঠিত হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, নিজেদের স্বার্থে সারা জেলার যাত্রীদের জিম্মি করাটা সন্ত্রাস। তারা বাস ধর্মঘট ডাকতে পারে। কিন্তু সবধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ার সাহস তারা দেখিয়ে যাত্রীদেরই জিম্মি করছে।
অনির্দিষ্টকালের হঠাৎ ধর্মঘটের ফলে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ জেলার আভ্যন্তরীণ সকল সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল বিকেল পর্যন্ত। মোড়ে মোড়ে শ্রমিক-মালিক পরিষদের কর্মীরা টহল দেয়ায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। বাস মিনিবাস, দূরপাল্লার বাসসহ সবধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কসহ জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কে।
সুনামগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক-মালিক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. জুয়েল মিয়া বলেন, দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা নিরাপত্তার দাবিতে এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে ধর্মঘট পালন করেছি। তাছাড়া আমাদের দাবির মধ্যে রাস্তাঘাট সংস্কারের বিষয়টিও আছে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে মামলা দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা রেকর্ড না করায় আমরা বাধ্য হয়েই ধর্মঘট পালন করেছি।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, আমরা মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। বিকেলে সন্তোষজনকভাবেই সমঝোতার ভিত্তিতে তারা অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।