গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “অভাবের তাড়নায় পাঁচ সন্তানর জননীর আত্মহত্যা”। এই শিরোনামের সঙ্গে “দাবি একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই” কিংবা “তাহিরপুরে ইয়াবাসহ ২ যুবক গ্রেফতার” এই দুইটি সংবাদ শিরোনামও এই একই সংবাদপত্রের একই পৃষ্ঠায় পাশাপাশি তিনটি স্তম্ভে ছাপা হয়েছে। এই তিনটি শিরোনাম তিন রকম কথা বলে পাঠককে, তিন রকম বার্তা বহন করে আনে পাঠকের কাছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত আলাদা আলাদা বলে বোধ করি তারা একে অন্যের থেকে বিশেষভাবে আলাদা ধাঁচের। একটিতে মাদক বিস্তারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চোরাচালান, একটিতে পরিবহন ব্যবসার লাগামহীন মুনাফা লুণ্ঠনের সঙ্গে সড়কে তথাকথিত দুর্ঘটনার মোড়কে প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রতিকারহীন হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা এবং অন্যটিতে তৃণমূল জনতার একশ্রেণির মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্ন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত প্রদান করছে। এই তিনটি খবর যতোই পরস্পর থেকে আলাদা হোক না কেন তারা আর্থনীতিক দিক থেকে কিন্তু একসূত্রে গাঁথা তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তাহিরপুর একটি প্রত্যন্ত উপজেলা। এ উপজেলায় সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির বিস্তার নেই, এমন তো নয়। তা হলে সেখানে একজন পাঁচ সন্তানের জননী অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা করবেন কেন? লোকের ধারণা দীর্ঘ দিনব্যাপী লেগে থাকা অভাবের তাড়না সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করেছেন। একজন মানুষ ভাত খেতে পেলে মরতে যাবে কেন? পরিবারটি যে, অভাবের মধ্যে দেড় যুগেরও বেশি কাল ধরে নিপতিত হয়ে আছে তার যথেষ্ট তথ্যগত আলামত সংবাদবিবরণ থেকে প্রাপ্ত হওয়া যায়। ১৮ বছর কম সময় নয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ কেবল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হয়নি, মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১৬০০ ডলার বা বলা যায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ এই পরিবারটি উন্নয়নের কোনও সুফল পেল না। তা কী করে হয়? পরিবারটির অভাবগ্রস্ততার সংবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাকেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, এই পরিবারটি কী করে সরকারি ভিজিএফ কর্মসূচির বাইরে থেকে গেলো?
এর বেশি কীছু আপাতত বলতে চাই না। জানি না দেশে এমন কত শত পরিবার আছে যে-পরিবারগুলো অভাবের তাড়নায় এমনি ধুঁকে ধুঁকে মরছে, আমাদের প্রচলিত আর্থনীতিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে। আশা করি এই ধরনের অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খোঁজে বের করা হবে এবং তাদের জন্য ভিজিএফ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রত্যাশা করি।