1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বেসরকারি শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ প্রসঙ্গে : মো. রুহুল আমিন

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি পেশাজীবী সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষকরা ‘প্রাণের দাবি পূরণে এসো মিলি প্রাণের বন্ধনে’ স্লোগানকে সামনে রেখে এই সংগঠন গড়ে তোলেছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকদের অর্থ, শ্রম ও মেধা এই সংগঠন গড়ে উঠার পেছনে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও অধিক কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন। এই সংগঠন জন্ম নিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনকে সাংগঠনিক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষানীতিতে বৈষম্যের কোনও স্থান ছিল না। তিনি মনে করতেন শিক্ষা সকল মানুষের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। যাঁরা শিক্ষকতা করবেন তাঁদের মধ্যেও কোনও বৈষম্য থাকুক তাও তিনি চাইতেন বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। তিনি চাইতেন না যে, শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে প্রভেদ তৈরি করে তাঁদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হোক। সেজন্য তিনি দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন এবং সংবিধানে মূল চার নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র ছিল একটি। তাছাড়া দেশের বড়বড় কলকারখানা তিনি জাতীয়করণ করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে শিক্ষাকে যে জাতীয়করণ করতেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
অথচ এখন শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত শিক্ষকদের মধ্যে দিনে দিনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বণ্টনে তফাৎ করে তাদের বিভেদ আরও তীব্র করে তোলা হচ্ছে। বেতন, ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস ইত্যাদি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাঁরা তাই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।
বেসরকারি শিক্ষকরা কেমন আছেন? একবার ভেবে দেখুন। সরকারি প্রতিশ্রুতি ছিল ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখীভাতা, বোনাস, পেনশন, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে শিক্ষকদের মানবেতর জীবনযাপনের কষ্ট কীছুটা হলেও লাঘব করা হবে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতিই থেকে গেছে, কোনও অর্থ বছরেই বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বেসরকারি শিক্ষকের জীবনে কোনও উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি। এদিক থেকে বিবেচনায় বিশ্বে কোথাও বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের মতো সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত কোনও পেশাজীবী সম্প্রদায় খোঁজে পাওয়া যাবে না। কাজের অনুপাতে তাঁরা যে বেতন পেয়ে থাকেন তাকে অপ্রতুল বলা ছাড়া কোনও গত্যান্তর নেই। প্রতিশ্রুত ৫% ইনক্রিমেন্ট ২০% বৈশাখীভাতা তাঁরা আবেদন-নিবেদন করেও পান না। বোনাস পান নামে মাত্র। পেনশন পান ২৫%। বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসাভাতা পান ১০০০ টাকা করে। বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার এই স্বল্পতা কোনও বিবেচনায়ই সঙ্গত হতে পারে না। যেখানে এক কোঠার একটি সাধারণ ঘরের ভাড়াই দুই-আড়াই হাজার টাকার বেশি।
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়ে টানা একমাস আমরণ অনশন, মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন, সর্বস্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়ের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। দাবি ছিল বেসরকারি শিক্ষকদেরকে সরকারি শিক্ষকদের সমান বেতন দিতে হবে। দিতে হবে সরকারি শিক্ষকদের সমান সুযোগ-সুবিধা। সেজন্য আমাদের দাবি ছিল একটাই : চাকুরি জাতীয়করণ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা দাবি-দাওয়া জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। জাতীয় প্রেসক্লাবে আমাদের অনশন চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ বৎসর থেকে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে বৈশাখীভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা অনশন ভেঙে যার যার কর্মস্থলে ফিরেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবার সরকারি শিক্ষকরা ঠিকই বৈশাখীভাতা ২০% পেয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদেরকে বৈশাখীভাতা দেওয়া হয়নি। এই বিমাতা সুলভ আচরণের কোনও বোধগম্য ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই।

সরকারি নির্দেশ মান্য করে বাংলা নববর্ষবরণ উৎসবে বেসরকারি শিক্ষকরা কালোব্যাজ ধারণ করে উৎসবটি পালন করেছেন এবং তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরকারের বরাবরে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে যে, বেসরকারি ‘এমপিও’-ভুক্ত শিক্ষকদের স্কুলের ফান্ডের টাকা সরকারি তহবিলে নিয়ে গিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে জাতীয়করণ করা হোক। এতে জাতীয়করণ করতে সরকারের কোনও বাড়তি টাকা ব্যয় হবে না। বেসরকারি শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ করার প্রশ্নে এর বেশি আমাদের কী আর করার থাকতে পারে? সাধ্যেরও তো একটা সীমা থাকা চাই।
পরিশেষে বলি, সরকারি বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূর না করা হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশ কোনও দিন এগিয়ে যেতে পারবে না এবং শিক্ষার মানউন্নয়নও সম্ভব হবে না। শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলে প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে।
[মো. রুহুল আমিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো), কেন্দ্রীয় কমিটি]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com