আমাদের দেশে একটি যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭১ সালে। আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এটি। এ যুদ্ধে জয় লাভ করে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যে স্বাধীনতা আমাদের জাতির হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন। এর চেয়ে বড় অর্জন আর হতে পারে না। অথচ এই গৌরবের অর্জন থেকে জাতিকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চায় কিছু সংখ্যক কুলাঙ্গার। তারা ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রস্থপতি মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এই গৌরবের অর্জনকে ম্লান করে দেবার প্রয়াস পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির কবর রচনা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ফিরে যেতে চেয়েছে ৭১-এর আগের রাজনীতিক-সামজিক বাস্তবতায়।
একটা নির্দিষ্ট সময় পর আবার অবস্থা পাল্টেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনার বাহকরা পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে সমাজচেতনায় শানিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারকে তারা ঠিকই কমিয়ে দিতে পেরেছে। কেবল তাই নয় রাষ্ট্রসমাজ রাজনীতিসংস্কৃতির প্রতিটি পরিসরে তারা অনুপ্রবিষ্ট করেছে বিষাক্ত মানবাস্ত্র। সম্প্রতি এই বিষাক্ত মানবাস্ত্রের নির্মূলকরণ অনিবার্য জাতীয় কর্তব্য হয়ে পড়েছে। তাই দেশের ভেতরে মানুষের প্রতিটি স্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে দেশপ্রাণ সর্বমহলের পক্ষ থেকে।
গতকাল সুনামগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির পাঠকক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি মতবিনিময় সভায় বক্তরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। সেখানে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চর্চা বাড়ানো ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মকা- পরিচালনা করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের সকল কার্যক্রম সফলতা লাভ করুক।
মুক্তিযুদ্ধ একটি চলমান রাজনীতিক প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধ চলতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে যুদ্ধ রাজনীতির চূড়ান্ত বিকশিত রূপ। যুদ্ধে হার-জিত একটি সাময়িক প্রক্রিয়া মাত্র। সমাজের বিকাশই শেষ কথা। সমাজ কখনও পিছন দিকে হাঁটা দেয় না। সমাজকে জোর করে সাময়িকভাবে থামিয়ে দেওয়া যায় বটে কিন্তু চিরতরে স্থবির করে রাখা যায় না। সমাজের প্রগতির চাকায় শেষ পর্যন্ত প্রগতির বিরোধীরা পিষ্ট হয়ে নির্মূল হয়। এটাই সমাজ বিকাশের নিয়ম। মুক্তি মানুষের চিরন্তন অধিকার। বিরোধীদের মাড়িয়ে সমাজের চাকা চলে যায় প্রগতির পথে। কোনও বাধাই মনে না। একেই বলে বিপ্লব। তাই সমাজের নিয়মানুসারে যত বাধা ততো বিপ্লব।
মুক্তিযুদ্ধ একটি ঐতিহাসিক প্রপঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা তারাই করে যারা চেতনায় পেছন ফিরে হাঁটতে অভ্যস্ত। তারা ভুলে যায় যে, আজ যে চিন্তাকে পরিহার করা হচ্ছে আগামীতে সে চিন্তাকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন করে নিতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের জন্ম হয়ে গেছে। এটাকে আর জন্ম হওয়ার আগের সময়ে বা অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। সে চেষ্টা হবে মূর্খতা। যে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করা হচ্ছে সে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আশ্রয়েই নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে কেউই বুড়ো থেকে ধীরে ধীরে শিশু হয়ে মায়ের কোলে উঠে স্তন্য পানে রত হয় না।