কী করা যায়? বিরক্তির একশেষ। দুর্নীতিকে ছাড়াতে চাই, কিন্তু দুর্নীতি আমাদের ছাড়ে না। গায়েগতরে জোঁকের মতো লেপ্টে থাকে। ছাড়ে না তার কারণ আছে। আর কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের বগলতলিতেই। আমাদের মধ্যেই কতিপয় এই দুর্নীতিকে জীবনের একমাত্র নীতি করে নিয়েছে। তাই দুর্নীতি আমাদের ছাড়ে না। একজন তার হাতের ছড়ি ঘুরাতেই পারে, অন্যের নাকে না লাগলেই হয়। দুর্নীতি যে-কেউ করুক, তার সে স্বাধীনতা আছে। কারও স্বাধীনতায় হাত দেওয়া গুরুতর অন্যায়। দুর্নীতি কারও ক্ষতি না করলেই হলো। ক্ষতি করলেই দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। ধরবে। কিন্তু যদি না ধরে? গুরুতর প্রশ্ন বটে।
অন্যায় করে করে লোকে পার পেয়ে যায়। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধুরা দুর্নীতির জাল বিছিয়ে রেখেছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে, সবখানে দুর্নীতিকে তারা নীতি করে নিয়েছে, সে অনেক আগেই। লুটপাটের বিভিন্ন আর্থনীতিক ক্ষেত্রে বিভক্ত করে নিয়ে দখল নিয়ে রেখেছে আগেভাগেই। তৈরি করে রেখেছে শক্তিশালী চক্র। দুর্নীতির এই সব ক্ষেত্রের একটি ক্ষেত্র হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণের ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে ও বজায় রেখে বিভিন্ন ছলচাতুরি অবলম্বন করে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ব্যস্ত থাকে দুর্নীতিবাজরা। হাওররক্ষাবাঁধের টাকা হেনতেন প্রকারে পকেটস্থ করতে দুর্নীতিবাজরা আগেও ছিল, এখনও আছে। তার চাক্ষুষ প্রমাণ, এই তো গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ। শিরোনাম : “৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা”। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ‘শ্রমিক সংকটের কারণে এবার দুই শতাধিক মেশিনে মাটি কাটা হলেও এখন ফসলরক্ষা বাঁধের পূর্ণ বিল তোলতে মাস্টার রোলে মেশিনের বদলে শ্রমিকের নাম বসিয়ে ম্যানুয়েল পদ্ধতি অনুসরণ করে বিল তোলার প্রস্তুতি চলছে।’ এইভাবে বিল করে টাকা উত্তোলন করতে পারলে সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে দুর্নীতিবাজরা।
এখন প্রশ্ন হলো সরকার কি এই বিপুল পরিমাণ টাকা দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দেবে নাকি এই বিষয়টির তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের বিচারের সম্মুখীন করে শাস্তির ব্যবস্থা করবে, অথবা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকবে।