বিশেষ প্রতিনিধি ::
গত মঙ্গলবার ভারতের কলকাতা রেলস্টেশনে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে আল-কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারকৃত সামাদ মিয়া (২৬) ওরফে তানভির, ওরফে তুষার বিশ্বাস ওরফে সাইফুল সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা। তার আসল নাম সামাদ মিয়া। সে উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের খাটশোলা গ্রামের কলমদর আলীর ছেলে। ৯ ভাই তিন বোনের মধ্যে সে ভাইদের মধ্যে ৬ষ্ঠ সন্তান। সে বুয়েটের ছাত্র বলে পারিবারিক সূত্র জানা গেছে। বাংলাদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে কলকাতার মিডিয়া জানিয়েছে সামাদ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য। তবে তার জঙ্গিবাদে ঝুকে পড়ার কোন খবর জানেনা পরিবার।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ছাতক মঈনপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করার পর সামাদ মিয়া সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ডিপ্লোমা পাস করে। পরবর্তীতে বুয়েটে ভর্তি হয়। এলাকায় সে নিভৃতচারী এক মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিলেট পলিটেকনিকে পড়াশোনার সময় সে শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। সেখান থেকেই সে জঙ্গিবাদে ঝুঁকতে পারে বলে তারা মনে করেন।
কলকাতায় গ্রেফতারের পর বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেওয়ায় বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা দল সামাদ মিয়ার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। তারা তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তার ও তার পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ততার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। জানা গেছে, সামাদ মিয়ার বাবা কলমদর আলী দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে এসে স্থায়ীভাবে বাস করছেন তিনি। সামাদ মিয়ার চার ভাই ইতালিতে বসবাস করেন। তার পরিবার এলাকার সচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবার হিসেবে স্বীকৃত।
সামাদ মিয়ার প্রতিবেশী শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায় এক বছর আগে তাকে দেখেছিলাম। বাড়িতে খুব কমই আসতো। এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা তাকে একজন মেধাবী ও ভদ্র ছেলে হিসেবেই জানি। সে এমনভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়বে আমাদের কল্পনায়ও ছিলনা।
সামাদ মিয়ার সহপাঠী ও একই গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, এসএসসি পর্যন্ত সামাদ আমাদের সঙ্গে পড়ালেখা করেছে। পরে সে সিলেট যাওয়ায় তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিলনা। তবে দীর্ঘদিন পর পর সে অল্প সময়ের জন্য বাড়িতে আসতো। বাড়িতে আসলেও তার আচরণে আমরা তেমন কিছু লক্ষ করতে পারিনি।
উল্লেখ্য এর আগেও ছাতকে একাধিক শীর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বছর ঢাকার অদূরে গাজীপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত জঙ্গি সাইফুল ইসলাম ওরফে বাবুল ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরগাতি গ্রামের ছেলে ছিল। ওই সময় ডিএমপি নিউজ পোর্টালে জঙ্গি হিসেবে বাবলুর ছবি প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মইনুল হাসান শামীমকে টঙ্গি থেকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে প্রকাশক দীপন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল। জঙ্গি শামীম কলেজ জীবনে শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে। এছাড়াও দেশব্যাপী সাইবার জঙ্গি হিসেবে পরিচিত ও আব্দুল হক (হ্যাক নামে পরিচিত) জঙ্গিও ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের গাঙপাড় গ্রামের বাসিন্দা। আব্দুল হক সিম ক্লোনিং করে জঙ্গিবাদী প্রচারণা চালাতো। দেশের বিশিষ্টজন রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লেখকদের হত্যার হুমকি দেওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সর্বশেষ দেশের বাইরে আলকায়েদা জঙ্গি অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সামাদ মিয়াও ছাতকের বাসিন্দা। ছাতকে একের পর এক বড় জঙ্গির সন্ধানে এলাকাবাসীও চিন্তিত।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, কলকাতায় আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে সুনামগঞ্জের এক যুবক গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পরই আমরা সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। সামাদ মিয়া সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তার নিজের ও পারিবারিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর আগে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততায় গ্রেফতারকৃত কয়েকজন ছাতকের বাসিন্দা ছিল। তবে তারা অন্যান্য এলাকায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকলেও নিজ এলাকায় তাদের কোন অ্যাক্টিভিটি নেই।