1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

চোখে সোনার বাংলা, হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু : বিজন সেন রায়

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে একজন মহামানবের আবির্ভাব কামনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সেই ব্যক্তি যিনি মহামানবের সংজ্ঞা ধারণ করে বাঙালি জাতির মাহেন্দ্রক্ষণে আবির্ভূত হয়েছিলেন উদ্ধারকর্তা হিসেবে। বঙ্গবন্ধু বাঙালির দুঃখ-কষ্টকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। বাঙালি জাতিকে শোষণমুক্তির সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। যা আর কেউ দিতে পারেননি; এমনকি জাতীয় চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধও করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বাঙালি জাতির দুঃখ-বেদনা, হতাশা-বঞ্চনা ও আশা-আকাক্সক্ষার কথা ¯পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গরূপে তাঁর কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছিল। তিনিই বলেছিলেনÑ ‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলবÑ আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে’।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য আরেকটি কালো অধ্যায়। সে অধ্যায় রক্তাক্ত স্মৃতিময়। বাঙালির প্রাণের নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই দিন সপরিবারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানপন্থী, ক্ষমতা লোভী ও চক্রান্তকারী কিছু ঘাতক। এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেদিন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ ও জাতি। হতবাক হয়েছিল সারা বিশ্বের সভ্য মানুষ। কেঁদেছিল বাঙালি, কেঁদেছিল বিশ্ব বিবেক।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে আশ্রয়, মদদ এবং পুনর্বাসন করা হয়েছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমান কবর খুঁড়ে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তার মাশুল এখনো গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও আমরা ’৭১-এর চেতনায় ফিরে যেতে পারিনি; ফিরে যেতে পারিনি ’৭২-এর সংবিধানে। জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রের চার মূলনীতি বাতিল করার পর, বর্তমানে তা পুনঃস্থাপিত হলেও এখনো আমরা সেই বিষবাষ্প থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
বস্তুত বঙ্গবন্ধুই ছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলাদেশের প্রথম প্রকৃত স্বপ্নদ্রষ্টা। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিতে তাঁকে জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তিনি তাঁর জীবন সমর্পণ করেছিলেন এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। এটা বাস্তব সত্য, স্বাধীনতা লাভের পর বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে না চিনলেও বঙ্গবন্ধুকে চিনত। আসলে বঙ্গবন্ধুই তো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির হৃদয় জয় করেননি, তিনি জয় করেছিলেন বিশ্ববাসীর হৃদয়।
স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশ গঠনে তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি সামগ্রিকভাবে প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করে প্রশাসনযন্ত্রকে জনসেবায় নিবেদিত হওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রকার ভারী শিল্প, ব্যাংক, বীমা ইত্যাদিকে জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষিত জনগণ ব্যতীত জাতীয় উন্নতি সম্ভব নয়। সেজন্য তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি চালু করার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণও করেছিলেন। দেশের জন্য সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের সকল পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সমস্ত কর্মসূচির মূলে একটি সত্যই ছিল আর তা হচ্ছে- আত্মনির্ভরশীল একটি জাতি তথা সর্বক্ষেত্রে স্বনির্ভর বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু দেশের কৃষি ব্যবস্থায় গতি সঞ্চার করেন। সকল কৃষক যাতে জমি পায় সেজন্য বঙ্গবন্ধু ভূমি সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি কৃষিতে ভর্তুকি প্রথা চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বারবার কৃষকের কাছে ছুটে গিয়েছেন, তাদের সুখ-দুঃখ ও সমস্যার কথা শুনেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনÑ ‘আমি দেখতে চাই সোনার বাংলা, আমি দুঃখী কৃষক-শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, আমি দেখতে চাই এদেশের কৃষক পেটভরে খেতে পারছে, তাদের গায়ে কাপড় আছে, তারা অত্যাচারিত বা বঞ্চিত হচ্ছে না’। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেনÑ বাংলার কৃষক অন্যায় করে না, তারা বাংলার মাটি থেকে সোনার ফসল ফলায়। তাই এসব সোনার মানুষের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি একটি স্বাধীন, সার্বভৌম আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বস্তরের মানুষকে সমন্বিত করে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা এ চারটি মূলনীতিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বিভিন্ন মত, পথ ও নির্দেশনায় দ্বিধাবিভক্ত জাতি বঙ্গবন্ধু কখনো প্রত্যাশা করেননি। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি জাতিসত্তার অভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী সকলকে নিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে। এজন্য বঙ্গবন্ধুর সংজ্ঞায় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দগুলো পৃথক সত্তায় বিরাজ করে না বরং এসবই একই মোহনায় বিরাজিত অভিন্নার্থক। বঙ্গবন্ধু সেই গণতন্ত্র চেয়েছিলেন যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে।
আজকের বাংলাদেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। একদিকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে চলছে লড়াই, অন্যদিকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা। যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে দেশে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। চোখে সোনার বাংলা আর হৃদয়ে বঙ্গন্ধুকে ধারণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমাদের পথ প্রদর্শক। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য তাঁর প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ আজো আমাদের কাছে আলোকবর্তিকা স্বরূপ। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের ইতিহাসের মহানায়কের মহামন্ত্রেই একদিন গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। ১৯৭৫-এ ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সকল শহীদদের জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো’ কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উল্লেখ করে এ লেখার সমাপ্তি টানছিÑ
“এসেছে কান্নার দিন, কাঁদো বাঙালি কাঁদো/জানি, দীর্ঘদিন কান্নার অধিকারহীন ছিলে তুমি/হে ভাগ্যহত বাংলার মানুষ, আমি জানি/একুশ বছর তুমি কাঁদতে পারোনি, আজ কাঁদো।/আজ প্রাণ ভরে কাঁদো, এসেছে কান্নার দিন,/দীর্ঘ দুই-দশকের জমানো শোকের ঋণ/আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে।”
[লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সুনামকণ্ঠ]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com