1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মাহে রমজানের প্রস্তুতি ও করণীয় : আলহাজ কাজী মাহবুবুল ইসলাম

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭

আর মাত্র কিছুদিন পরেই মাহে রমজানের বাঁকা চাঁদ পশ্চিমাকাশে উদিত হবে; রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের মধ্যে হাজির হবে মাহে রমজান। পবিত্র এ মাসকে বরণ করে নিতে চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি।
রমজানে সফল ব্যক্তিদের জন্য বেহেশতে ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা সদা উন্মুক্ত থাকবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। বাস্তবে সব ইবাদত মানুষ দেখতে পায়। একমাত্র রোজাই মানুষ দেখতে পায় না। রোজাদারের মতো থেকেও একজন মানুষ যদি গোপনে কিছু খায় তা কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। এটা একমাত্র জানবেন আল্লাহ। আর এ জন্যই এ রোজার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেবেন। এ মহাসৌভাগ্য বহনকারী মাহে রমজান আমাদের দ্বারে সমাগত। এ মাহে রমজানকে কি আমরা স্বাগত না জানিয়ে পারি?
রমজানকে সঠিকভাবে বরণ করে নিতে হলে প্রত্যেক মুমিনের থাকতে হবে বিশেষ প্রস্তুতি, বিশেষ পরিকল্পনা। প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়া বড় ধরনের কিছু অর্জন করা যায় না। মহানবী (সা.) রমজানের আগেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব মাস এলেই তিনি দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। (হে আল্লাহ আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন)।
মাহে রমজানের হক আদায় ও মর্যাদা রক্ষার অনুশীলনের জন্য রাসুল (সা.) বছরের অন্যান্য মাস অপেক্ষা রজব ও শাবান মাসে বেশি করে নফল রোজা রাখতেন। তিনি বিশেষত শাবান মাসে নফল রোজা ও ইবাদতের পরিমাণ পূর্ববর্তী মাস অপেক্ষা আরো বাড়িয়ে দিতেন। কেননা শাবান মাসের পরই বরকতময় মাস রমজানের আগমন ঘটে। তাই শাবান মাস মুসলমানদের কাছে মহিমান্বিত রমজান মাসের সওগাত নিয়ে হাজির হয়। রাসুল (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাস অপেক্ষা আরো বেশি তিলাওয়াত ও নামাজ আদায় করে মাহে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকতেন। উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ একমাস রোজা পালন করতে দেখিনি; কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম)। রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের সুবর্ণ সময় মনে করতেন এবং সাহাবা ও পরিবার পরিজনদেরকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। সাহাবায়ে কেরামও রাসুল (সা.) কে পুরোপুরি অনুসরণ করতেন। তারাও বেশি বেশি করে নফল রোজা, তিলাওয়াত, জিকির, তাসবিহ, ইসতিগফার ও নফল নামাজ আদায় করে মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিতে থাকতেন। সাহাবায়ে কিরাম শাবান মাসে আসন্ন রমজান মাসকে নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিরা হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করে জাকাত প্রদানের প্রস্তুতি নিতেন।
যখন রমজানের আগমন হতো, তখন রাসুল করিম (সা.) অতিশয় আনন্দিত হতেন। তিনি সাহাবাদের উদ্দেশ করে বলতেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান আগমন করেছে।’ হজরত সালমান ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা রাসুল (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখে এক বক্তৃতায় আমাদেরকে বললেন, হে, লোক সকল তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে একটি মহান মোবারক মাস। এমন মাস যাতে একটি রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহুর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করলো, সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো, সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। উহা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। উহা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। ইহা সেই মাস যাতে মুমীনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সেটা তার জন্য তার পাড়াপড়শীর ক্ষমা স্বরূপ হবে এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার সওয়াব হবে সে রোজাদার ব্যক্তির সমান অথচ রোজাদারের সওয়াবও কম হবে না। উপস্থিত সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না, যা দ্বারা রোজাদারকেই ইফতার করাতে পারে? নবী করীম (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ সওয়াব দান করবেন ওই ব্যক্তিকে যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহ খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাওজ (কাওসার) থেকে পানীয় পান করাবেন যার পর জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত পুনরায় সে তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন মাস যার (১০ দিন) প্রথম দিক রহমত, মধ্যম (১০ দিন) দিক মাগফিরাত আর শেষ (১০ দিন) দিক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর যে এ মাসে নিজ দাস-দাসীদের (অধীনস্তদের) প্রতি কার্যভার কমাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাত)
তাই মাহে রমজানের অসীম কল্যাণ ও বরকত লাভের প্রত্যাশার জন্য দৈহিক ও মানসিকভাবে ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরী।
রমজানের আগেই যা করণীয় :
১. এই মহান মাসের আসন্ন আগমনে খুশি হওয়া, কেননা মহানবী (সা.)ও খুশি হতেন।
২. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেয়া এবং রমজানের ফজিলত অবগত হওয়া।
৩. পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত : মাহে রমজানে আপনি কতটুকু তেলাওয়াত করতে চান তা আপনার শক্তি, সামর্থ্য ও সময় বিবেচনা করে লিখুন।
৪, কোরআন অধ্যয়ন : পবিত্র রমজানে কোরআন নাজিল হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য। তাই অর্থ ব্যাখ্যাসহ কোরআন বুঝা একান্ত জরুরি। এ মাসে অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য সময় আল্লাহর কালাম বুঝার জন্য বরাদ্দ করুন।
৫. সহিহ তেলাওয়াত শিক্ষা : সহিহ তেলাওয়াত বিশুদ্ধ নামাজের শর্ত। এ পবিত্র রমজানে আপনি মহল্লার মসজিদে রমজান উপলক্ষে আয়োজিত কোরআন প্রশিক্ষণ ক্লাসে সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে শামিল হোন। অথবা একজন ভালো কারীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের প্রশিক্ষণ নিন। নিবিড় প্রচেষ্টা চালালে এক মাসেই আপনি বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষায় একটা ন্যূনতম মানে চলে আসতে পারবেন। যারা জানেন তারাও এ মহৎ কর্মে অংশ নিলে তা আপনাদের তেলাওয়াতের মানকে আরো সুন্দর করবে।
৬. নফল ইবাদাত : তারাবিহ, নফল ইবাদত ও দান সদকার ব্যাপারেও আপনি পরিকল্পানা নিতে পারেন। আপনি জাকাতের দাতা হলে জাকাত হিসাব-নিকাশ ও বিলিবণ্টনের কাজটি এ মাসে সেরে নিতে পারেন। এ মাসের একটি বিশেষ ফজিলত হলো এ মাসে একটি ফরজ ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান এবং একটি নফল একটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব। তাই মহান আল্লাহর এ বিশেষ সুযোগ গ্রহণে আমাদের উৎসাহী হওয়া একান্ত জরুরি। সেহরির কারণে এ মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা খুবই সহজ। কিন্তু অনেকেই এ সময়ে রেডিও-টিভির সেহেরি অনুষ্ঠান শোনা ও দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে ইসলামি জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে, সওয়াবও হবে কিন্তু হাদিস অনুযায়ী আপনি বেশি লাভবান হবেন যদি এ সময়টা আপনি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া-দরুদ পাঠ ও আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে কাটান।
৭. ইতিকাফ : রমজানে ইতিকাফ করতে চাইলে আপনাকে তারও দৃঢ় পরিকল্পনা করতে হবে এবং সে নেক ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পারিবারিক কাজগুলোও আপনাকে আগেই শেষ করতে হবে।
৮. রমজানের পবিত্রতা রক্ষা : রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় বিশেষ পরিকল্পনা নিন। কোনো বদ অভ্যাস থাকলে তা ছাড়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ যাতে বেরোজাদার না থাকে তার জন্য রমজানের আগেই তাদের সতর্ক করুন। কোথাও গাফলতি থাকলে তা দূর করুন।
আপনার নেক পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের ঐকান্তিকতা ও নিষ্ঠা একান্ত জরুরি। খালেসভাবে আল্লাহর পথে এগুতে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন। তাই আসুন, রমজানের আগেই রমজানকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করি।
[লেখক : ছাত্র, আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com