1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দেশের টানে ফিরে এসে জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারালেন আবু কয়সর দিপু

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ পরিদর্শক সুনামগঞ্জের সন্তান চৌধুরী আবু কয়ছর দিপু ডিভি লটারি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও দেশের টানে ফিরে এসেছিলেন। জননী জন্মভূমির সেবা করতে ছুটে এসেছিলেন বিলাসী জীবন ছেড়ে। আমৃত্যু কাজ করেছেন সততার সঙ্গে। কিন্তু জঙ্গিরা এই নির্লোভ, সাহসী ধার্মিক পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচতে দেয়নি। গত শনিবার রাতে তিনি জঙ্গিদের বোমায় প্রাণ হারিয়েছেন। রোববার রাতে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে যানাযা শেষে গাজীর দরগাস্থ গোরস্তানে মা-বাবার পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
স্বজনরা জানিয়েছেন, পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবু কয়সর দিপু ডিভি লটারিতে আমেরিকার স্থায়ী জীবনের মোহ ছেড়ে দেশসেবার জন্য মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। অথচ জঙ্গিদের ধর্মবিরোধী কার্যকলাপের বলি হতে হলো তাঁকে। শোকাহত স্বজনরা নির্ভীক পুলিশ কর্মকর্তার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর কী দোষ ছিল প্রশ্ন রেখেছেন স্বজনরা।
রোববার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার নিলয়-২ নং বাসায় গিয়ে দেখা গেল, বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন ওই বাসায়। বড় ভাইকে হারিয়ে বারান্দায় বিলাপ করছিলেন ছোট ভাই চৌধুরী আবু সায়েদ বাবু।
একপর্যায়ে বাবু বলেন, ‘২০০৭ সালে ভাইয়া ডিভি পেয়ে পরিবারের চাপে আমেরিকা গিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল না তাই পুলিশ বাহিনী থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিবার জোর করে পাঠিয়েছিল। সাত-আট মাস থাকার পরে তিনি সব কিছু ছেড়ে ফিরেছিলেন। আবার পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ভাই ধর্মপ্রাণ ছিলেন, নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। জঙ্গিরা ধর্মের নামে আমার ধার্মিক ভাইকে হত্যা করেছে। আমরা জঙ্গি নির্মূলে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাই।’
নিহত দিপুর প্রতিবেশীবন্ধু মোজাম্মেল হক মুনিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই শান্ত, ভদ্র, বিনয়ী ও খেলাধুলায় নিমগ্ন এক অনুকরণীয় ব্যক্তি ছিল দিপু। কখনো কারো কোন ক্ষতি করেনি। চাকুরি জীবনেও নির্মোহ ও নির্লোভ থেকেছে।
দিপুর ছোটবেলার বন্ধু জেলা বিএনপি’র সদস্য নাদির আহমদ বলেন, ‘আমাদের এই বন্ধুটি ছিল একজন আপাদস্তক সৎ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গিয়ে যে টাকা পেয়েছিল তা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে এবং বেতনের টাকায় সে কোনোভাবে চলত। বাহিনীর সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করে।’
দিপু’র সহকর্মী সার্জেন্ট শাহরিয়ার চৌধুরী বিপ্লব বলেন, অভিযানের দিন বিকেলে দিপু ভাইর সঙ্গে দেখা। তিনি আমাদেরকে সামনে যেতে বারণ করেছিলেন। বলছিলেন, ভিতরে যাইয়োনা, ওখানে যাওয়া নিষেধ। আমাদের বারণ করলেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে এগিয়ে যেতে হয়েছিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের পরিবারের মেধাবী ও সৎ অফিসার হয়েও প্রমোশন না হওয়ায় তার কিছুটা আক্ষেপ ছিল। আমরা যারা তার কাছের সেটা জানতাম।
প্রসঙ্গত, চৌধুরী আবু কয়ছর দিপু সুনামগঞ্জ শহরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক চৌধুরী আছদ্দর আলী মোক্তারের ছেলে। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ শহরের যে পাঁচটি বাড়ি পাকিস্তানি হানাদাররা জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার একটি ছিল তাঁদের। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ এবং পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ১৯৯১ সালে পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে যোগ দেন দিপু। ২০০৭ সালে তাঁর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের সঙ্গে যৌথ ডিভি লটারি জিতে পারিবারিক চাপে কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে সাত-আট মাস থেকে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসে আবারও পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।
২০১২ সালে জাতিসংঘ মিশনে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেন। সর্বশেষ সিলেট মহানগর পুলিশের এসবির সিআইও-১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান এই কর্মকর্তা ধর্মকর্ম নিয়মিত পালন করতেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com