1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

‘ইবার গরু ছাগল কিতা খাইয়া বাঁচতো?’

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

শামস শামীম ::
গ্রীষ্মের আকাশ যেন উফুর করে গরম ঢেলে দিচ্ছে। বোরো ফসল নিয়ে ডুবে যাওয়া দেখার হাওরের জল থেকে উঠে আসছে গরম বাতাস। খোলা শরীরে জয়কলস গ্রামের কৃষক বলাই লাল দাস চারটি গবাদি পশুকে শহীদ তালেব সেতুর পাশে ঘাস খাওয়াচ্ছেন। ফ্যাল ফ্যাল করে একবার গরুর ঘাস খাওয়া দেখছেন, আরেকবার ফসল নিয়ে তলিয়ে যাওয়া হাওর দেখছেন। ফসল কাটার আগেই তার দেখার হাওরের সম্পূর্ণ বোরো ফসল পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এখন গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এই কৃষক। এক মুঠো খড়ও সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। হতাশার সুরে বলাই দাস বলেন, ‘ইবার মানুষ আর পশু কিতা খাইয়া বাঁচতো’ (এ বছর মানুষ আর গবাদি পশু কি খেয়ে বাঁচবে)?
শুধু বলাই দাসই নয়, তাঁর মতো একই অবস্থা দেখার হাওর ও শনির হাওরপাড়ের কৃষকের। হাওর তলিয়ে যাওয়ায় তাঁদের কারো পক্ষেই হাওরাঞ্চলের গবাদিপশুর প্রধান গোখাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকরা গোখাদ্যের জন্য কৃষককে বিশেষ সহযোগিতার দাবি জানান। সরকারি কৃষি বিভাগের মতে এবার জেলায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি।
হাওরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে যায়, হাওর-ভাটির দেশ সুনামগঞ্জ জেলা বছরের ছয় মাসেরও অধিক সময় জলমগ্ন থাকে। এসময় ধান মাড়াই করে পাওয়া খড় খাইয়েই গবাদি পশুকে বাঁচিয়ে রাখেন তাঁরা। হাওরপ্রধান এলাকা সুনামগঞ্জের হাওর থেকেই গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড় সংগৃহীত হয়। ধান কাটার পর মাড়াই করে পাওয়া খড় ‘ভোলা বা লাছি’ (গম্বুজ) করে বাড়ির উঠোনে সারি সারি করে রাখেন। অনেক সচ্ছল কৃষকের খড়ের জন্য আলাদা ঘরও থাকে। বেষ্টনি ছাড়া সেই ঘরে শুধুই খড় সংরক্ষণ করা হয়। কৃষকরা এই ঘরকে ‘খেড়ের ঘর’ (খড়ঘর) হিসেবে ডাকেন। ধান তোলা শেষ হলে কৃষকরা শুকিয়ে সেই খড় ‘খড়ঘরে’ সংরক্ষণ করেন। হাওর এলাকায় খড় সংরক্ষণ করা বা লাছি তৈরি নিয়েও উৎসব করেন কৃষকরা। ধান তোলা হলে দিনভর পালাক্রমে এক কৃষক পরিবার আরেক পরিবারকে লাছি তৈরিতে সহযোগিতা করে। পরে রাতে নিমন্ত্রণের মাধ্যমে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। এবার হাওরের ধানতোলার মতো এবার খড় তোলার চিত্র অনুপস্থিত। পাহাড়ি ঢল ফসল তলিয়ে নেওয়ায় গোখাদ্য নিয়ে চিন্তিত হাওরপাড়ের কয়েক লাখ কৃষক।
কৃষকরা জানিয়েছেন এ মওসুমে অধিকাংশ হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তাঁদের পক্ষে গবাদি পশুর প্রধানখাদ্য খড় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে তাহিরপুরের বোরোভান্ডার খ্যাত শনির হাওর সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ধান ও খড় সংগ্রহ করতে পারেননি। দেখার হাওর, ঝাউয়ার হাওরের কৃষকরাও গোখাদ্য খড় সংগ্রহ করতে পারেননি। দিরাই উপজেলার ভরাম ও চাপতির হাওর, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া ও মইয়ার হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার সোনাডুবি, পাথারিয়া হাওর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরসহ জেলার অধিকাংশ হাওরই ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা খড় সংগ্রহ করতে পারেননি।
শনির হাওরপাড়ের কৃষক বাবলু বলেন, মানুষ খাদ্যের সংস্থান করে নিতে পারবে। কিন্তু গবাদি পশুর সেই সুযোগ নেই। শনির হাওরের প্রায় ৯৫ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় এবার কৃষকরা চরম চিন্তিত আছেন। কিভাবে গোখাদ্যের সংস্থান করবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তিনি বলেন, যাঁরা কিছু ধান কেটে কান্দায় রেখেছিল পানি এসে সেই ধান ও খড়গুলো নিয়ে গেছে।
উজানিগাঁও গ্রামের কৃষক মছদ্দর আলী বলেন, ‘আমরা আউরের কৃষকরা আদিখাল থাকিই খেড় খাবাইয়া গরুছাগল ফালইন। ইবার আউর আগেবাগে পাইন্যে নেওয়ায় খেড় তুলতাম ফারছিনা। ইবার গরুরে বাছাইতাম কিলা’ (আমরা হাওরের কৃষকরা আদিকাল থেকেই খড় খাইয়ে গবাদি পশু পালন করি। এই বছর হাওর পানিতে তলিয়ে নেওয়ায় কৃষকরা খড় সংগ্রহ করতে পারেননি। এ বছর গবাদি পশু বাঁচাব কি করে?)
একই গ্রামের কৃষক সিরাজ মিয়া জানান, বৈশাখে ধান তোলা শেষ হলে এমন সময়ে আমরা খড় নিয়ে ব্যস্ত থাকি। খড় সংগ্রহের সময় খাবারের বিশেষ আয়োজন করা হয়। এক কৃষক পরিবার আরেক কৃষক পরিবারকে খড় তোলতে সহায়তা করে। কিন্তু এবার এই সুযোগ পায়নি কেউ। গবাদি পশু পালন নিয়ে আমরা চিন্তিত আছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সরকারিভাবে এবার তাহিরপুরে ৪০ ভাগ ফসলে ক্ষতির কথা স্বীকার করা হলেও বাস্তবে ক্ষতি হয়েছে ৮০ ভাগের উপরে। কৃষকদের ধান তলিয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে প্রধান গোখাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে হাওরপাড়ের কৃষকরা চরম চিন্তিত। হাওরের কৃষকদের পুনর্বাসনে কৃষিবীমা চালুসহ বিশেষ প্রকল্প নেওয়ার দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢলে এবার সুনামগঞ্জের অধিকাংশ হাওর তলিয়ে গেছে। এ কারণে এ বছর চরম গোখাদ্য সংকট দেখা দিবে। এই আগাম গোখাদ্য সংকটের কথা আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com