সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের স¤পদ নিয়ে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেনজীর আহমেদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সাঈদ আহমেদ রাজা ও ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক।
শুনানিতে বেনজীর আহমেদের অনিয়ম–দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, দুদক ১০ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান না করে অভিযুক্তদের দায়মুক্তি দিয়েছে। এটি যাতে ক্লিয়ার সার্টিফিকেট হতে না পারে তার জন্য আমরা বিচারিক তদারকি চাচ্ছি।
বেনজীর আহমেদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে এসব প্রতিবেদন করা হয়েছে। রিটে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু দুদক এরই মধ্যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। আদালত তদারকি বা হস্তক্ষেপ করলে স্বাধীন অনুসন্ধান হবে না। এতে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া ঠিক হবে না।
এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ভারতে পাবলিক সার্ভিস হোল্ডারদের (সরকারি চাকরিজীবী) জন্য স¤পদ বিবরণী আইন আছে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় স¤পদ কত ছিল, আর অবসরে যাওয়ার সময় কত, তার বিবরণী দিতে হয়। অবসরে যাওয়ার সময় স¤পদের পার্থক্য ১০ শতাংশের বেশি হলেই মামলা হয়। এ ধরনের সিস্টেম আমাদের দেশেও করা দরকার। নইলে অর্থ পাচার, অবৈধ স¤পদ অর্জন বা দুর্নীতি – কোনোটিই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
হাইকোর্ট বলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। শুধু বাতাস খেয়ে বেড়ালে হবে না। আমাদের চোখ খোলা রাখতে হবে। আপনাদের শুধু মামলা করলেই চলবে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ আপনাদের দেখতে হবে। আমরা চাই, দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক। কেউ অন্যায় করে যাতে পার পেতে না পারে।
এ সময় দুদকের আইনজীবী বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অভিযোগ। অনুসন্ধানের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। এর আগে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন তিনি। চিঠিতে সাড়া না পেয়ে ১৮ এপ্রিল আইনি নোটিশ দেন রিগ্যান। এরপরও সাড়া না পেয়ে গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। মঙ্গলবার সেটি শুনানিতে ওঠে।
গত রোববার বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ স¤পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে “বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল পরিমাণ স¤পদ অর্জন করেছেন।
বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত স¤পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে চিঠিতে জানান ব্যারিস্টার সুমন। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স¤পদ সংগ্রহের জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।