শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। আমাদের মস্তিষ্কের তাপ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের নির্দেশে রক্তের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয়ে অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয় এবং ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু প্রচ- গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় থাকা বা পরিশ্রম করলে শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অকেজো হয়ে পড়ে। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়। হিট স্ট্রোক শেষ ধাপ হলেও হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে।
লক্ষণ দেখে বুঝবেন :
হিট স্ট্রোক হওয়ার আগে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে, গা ঝিমঝিম ভাব হয় এবং প্রচ- পিপাসা পায়। এরপরের ধাপে হিট দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর খুব বেশি ঘামতে থাকে। এ রকম হলে অবহেলা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যায়।
কাদের হতে পারে :
শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেক বেশি। যারা দিনের বেলায় প্রচ- রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকসাচালক, দিনমজুর, কনস্ট্রাকশন লেবার ইত্যাদি।
শরীরে ডিহাইড্রেশন হলে অর্থাৎ পানি কম পান করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। যাদের শরীরে অত্যধিক ঘামের মধ্যে পানি ও খনিজ বেরিয়ে যায়।
কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় যারা ডাইইউরেটিক গ্রুপের ওষুধ খান তাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
প্রতিকার :
গরমে যেহেতু ঘামের মাধ্যমে পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে সেহেতু প্রচুর পরিমাণে পানি খেয়ে শরীরকে হাইড্রেট করতে হবে। ইলেক্ট্রোলাইট ঘাটতি মেটাতে পনির সঙ্গে ও.আর.এস মিশিয়ে নিতে হবে। নাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ৪ টেবিল চামচ চিনি ও ১ চামচ লবণ এক লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যাগে রাখুন।
ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি পান করতে থাকুন। পানির পাশাপাশি ফলের জুস খেতে পারেন। কিডনি ও প্রেশারের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পানি পান করুন। পোশাক পরুন ঢিলেঢালা, সুতির কাপড়ের ও হালকা রঙের। বাইরে বেরোলে অবশ্যই ছাতা, টুপি, সানগ্লাস ব্যবহার করুন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঠা-া পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। ওয়েট ওয়াইপ রাখতে পারেন সঙ্গে। ত্বক অনুযায়ী সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।