‘ধর্মপাশায় জলমহাল শুকিয়ে মাছ শিকার : ইজারা বাতিলের সুপারিশ’ এই শিরোনামে গত ২৬ মার্চ ২০২৪ দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদ প্রতিবেদন করা হয়েছে। জলমহাল অর্থাৎ জলাশয় শুকিয়ে মাছ শিকার মাছের কেবল নয়, জলজ সমস্ত জৈবপ্রজাতির অর্থাৎ সকল প্রকার প্রাণী ও উদ্ভিদপ্রজাতির বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করে এবং প্রকারান্তরে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার প্রতিক্রিয়ার নিয়মানুসারে এই জলজজৈবপ্রজাতির বিলুপ্তির প্রতিক্রিয়া মানবপ্রজাতির বিলুপ্তায়নকে আমন্ত্রিত করে। এই জন্য সরকার ইজারানীতিতে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু ইজারাদাররা সে-নীতি কার্যত মাঠপর্যায়ে মানছেন না এবং আইন প্রয়োগে নিয়োজিত প্রশাসনের লোকেরা এইভাবে আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এক দলের আইন-না-মানা ও আরেক দলের আইন-না-মানার প্রতিকার করতে ব্যর্থ হওয়ার ফাঁকের ফাঁদে পড়ে ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’ গানের কলির মতো দেশ ছটফট করছে। সে ছটফটানি কেউ দেখছে না, তরপানিই সার হচ্ছে। অনন্তর জৈবপ্রজাতি বিনাশের অপরাধ নির্বিঘেœ সংঘটিত হচ্ছে দিকে দিকে। এই অপরাধের কোনও ক্ষমা হতে পারে না। তাই বিদগ্ধমহল মনে করেন, যাঁরা প্রতিকারের দায় নিয়ে জনগণের দেওয়া বেতন ভোগ করেন তাঁরা ‘প্রতিকার করার দায়’ এড়াতে পারেন না বিধায় নিয়োজিত পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়াই সঙ্গত। কাজ করতে না পারলে কাজের জায়গা দখল করে রাখার কোনও অধিকার কারও থাকতে পারে না। আর এর বিপরীতে উক্ত অপরাধের পরিণতিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে ভুক্তভোগী জনগণকেই এই প্রতিকারের কোনও না কোনও ব্যবস্থা করার পথ করে নিতে হবে, অর্থাৎ জলাশয় শুকিয়ে মাছ শিকারকে প্রতিহত করতে হবে। জলাশয় শুকিয়ে যেখানেই মাছ শিকার হবে সেখানেই সকলে মিলে প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপরদিকে, প্রকৃতপ্রস্তাবে ইজারা বাতিলের সুপারিশ কোনও কাজের কথা নয়। কারণ ইজারা বাতিল হলে সাধারণ মানুষের মাছ শিকারের চাপে শেষ পর্যন্ত জলাশয়গুলো মৎস্যশূন্য হতে খুব বেশি একটা সময় লাগবে না। সুতরাং আপাতত ইজারানীতিকেই মেনে চলতে হবে এবং এই ‘মেনে চলা’র অর্থটা হলো জলশুকিয়ে মাছ শিকার সম্পূর্ণ বন্ধ করা নিশ্চিত করাসহ মাছ শিকারের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাকৃতিক ভারসাম্যবিরোধী যন্ত্রসরঞ্জামের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
সরকারকে এ ব্যাপারে (জলশুকিয়ে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ভারসাম্যবিরোধী যন্ত্রসরঞ্জামের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা) বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাষ্ট্রপরিচালক শ্রেণিকে এ নিয়ে ভাবতে হবে। অন্যথায় তাঁরা যদি সেই অজগরটির মতো হতে চান, গল্পের যে-অজগরটি নিজের লেজ নিজেই খেতে শুরু করেছে, তা হলে অন্য কারও কোনও আপত্তি থাকার তো কোনও কথা নয়।