1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সোমালি জলদস্যুরা কি অপ্রতিরোধ্য?

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
সোমালি জলদস্যুরা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৪টি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ অঞ্চলের সমুদ্র-নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামানো যাচ্ছে না? তারা কি অপ্রতিরোধ্য?
হর্ন অব আফ্রিকা :
ত্রিকোণাকৃতির ভৌগোলিক মানচিত্রের কারণে পূর্ব আফ্রিকার একটি অংশকে ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ ডাকা হয়। হর্ন অব আফ্রিকা’র বড় অংশজুড়ে আছে সোমালিয়া। একদিকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধবিগ্রহ, অর্থনৈতিক দুর্দশা; অন্যদিকে জলসীমার নিরাপত্তায় প্রশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেখানে বাড়ে বিদেশি মাছ ধরা নৌযানের উপস্থিতি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয় জেলেরা। এরপর সোমালিয়ার সমুদ্র এলাকায় স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা করে। কিন্তু বিদেশি জাহাজ জিম্মি করে মুক্তিপণের অর্থ পেয়ে সোমালিয়ার অনেক তরুণ দস্যুবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
বেড়েছে আক্রমণের ঘটনা :
সোমালিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত এডেন উপসাগরের পথ ধরে বছরে প্রায় ২০ হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে। সুয়েজ খালের এই পথটি এশিয়া থেকে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সবচেয়ে দ্রুততম পথ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জাহাজ মালিকরা পণ্য পরিবহনে এই পথটি বেছে নেয়।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) তথ্যমতে, গত ছয় বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় শেষ তিন মাসে হর্ন অব আফ্রিকা’য় জাহাজ ও নাবিক জিম্মি করে উচ্চ মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
জলদস্যুতায় জড়িত স্থানীয় অভিজাতরা :
সোমালিয়ার দারিদ্র্য, অরাজকতা, আইনের শাসনের অভাব ও গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার কারণে দেশটির অনেক তরুণই জলদস্যুতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, আর এর সঙ্গে জড়িত আছে সোমালিয়ার স্থানীয় অভিজাতরাও। বিশেষ করে অন্য গোষ্ঠী বা ইসলামি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বা নির্বাচনী প্রচারণার অর্থের প্রয়োজনে তারা এই কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকে।
এছাড়াও পূর্ব আফ্রিকান জলসীমার দেশগুলো নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক সংস্থা ইন্ডিয়ান ওশান কমিশনের (আইওসি) মতে, সোমালিয়ায় মাছ ধরার নতুন নীতির কারণে বিদেশি মাছ ধরার জাহাজের প্রবেশ বেড়েছে। আর এর ফলে উপকূলীয় সোমালীয়রা আবারও জলদস্যুতার দিকে ঝুঁকে পড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আইওসি।
এছাড়াও সংস্থাটি ধারণা করছে, সোমালিয়া-ভিত্তিক আল-শাবাব গোষ্ঠীর কারণে জলদস্যুদের আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। তাদের ধারণা, চুক্তির মাধ্যমে আক্রমণকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে ওই গোষ্ঠী মুক্তিপণ আদায়ের একটি অংশ পায়। তাছাড়া লোহিত সাগরে হুতির আক্রমণের কারণে নৌবাহিনীর বেশিরভাগ নিরাপত্তা ওই অঞ্চলে চলে যাওয়াও একটি বড় কারণ।
যে কারণে অপ্রতিরোধ্য সোমালি জলদস্যুরা :
সাধারণত ছোট স্পিডবোটে এসে দড়ি আর মই দিয়ে জাহাজে উঠে নাবিকদের জিম্মি করে ফেলে সোমালি জলদস্যুরা। কোনো উপকূলরক্ষী বা পুলিশের শক্তিশালী উপস্থিতি না থাকায় প্রায় বিনা বাধায় জিম্মি করা জাহাজ সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করতে পারে সশস্ত্র এই জলদস্যুরা।
ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বলছে, তাদের রাডারে জলদস্যুদের টহল ধরা পড়ে। তারা জাহাজের ক্রুদের সতর্কও করে। কিন্তু ভারত সাগর থেকে এডেন উপদ্বীপ অঞ্চলটি বিশাল। ফলে যুদ্ধজাহাজ প্রত্যেক নৌযানকে সুরক্ষা দিতে পারে না, আবার সবসময় ঘটনার পর সেখানে সাথে সাথে উপস্থিতও হওয়া সম্ভব হয় না।
সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, সমুদ্রের আড়াই মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকা ছিনতাইপ্রবণ, যা পুরোপুরিভাবে টহল দেওয়া কার্যত অসম্ভব। এছাড়াও জলদস্যুরা বড় আকারের ‘মাদার শিপ’ ব্যবহার করে। এটি ব্যবহার করেই তারা সমুদ্রের মাঝখানে ছোট নৌযান থেকে আক্রমণ চালায়। সমস্যা হলো এই বড় জাহাজগুলোও মূলত ছিনতাই করা। এ কারণে সমুদ্রে চলাচল করা হাজার হাজার নৌকার মধ্যে থেকে দুর্বৃত্তদের জাহাজ খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।
জলদস্যুদের মুক্তিপণ আদায় :
বিশ্বব্যাংকের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সময়কালে হর্ন অব আফ্রিকার দস্যুরা ক্রুদের জিম্মি করে ৩৫৯ থেকে ৪২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আদায় করেছে। ২০১৩ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলদস্যুতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
তবে ২০১১ সালে সর্বোচ্চ ২১২টি হামলার পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুর আক্রমণ প্রায় বন্ধ ছিল। আর তা করতে সামষ্টিক পদক্ষেপ নিয়েছিল ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল (ইউএনএসসি)। তবে ছয় বছর পর অঞ্চলটিতে নতুন করে বাড়ছে জলদস্যুতার ঘটনা।
আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে অনুসারে, ২০২৩ সালে ১২০টি জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৫।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com