1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব? : আমীন আল রশীদ

  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হওয়া জামায়াতে ইসলামী প্রায় এক দশক পরে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় যে সমাবেশ করলো, তাতে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে যে, জামায়াত কি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরে পাবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে?
দীর্ঘদিন পরে রাজনীতিতে জামায়াতের প্রকাশ্য হওয়া নিয়ে নানা ফোরামে বহুমাত্রিক আলোচনা চলছে। সরকারের সঙ্গে তাদের কোনও সমঝোতা হয়েছে নাকি বিদেশি চাপের কারণে সরকার তাদের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে অথবা জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে দেওয়া আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের কোনও কৌশল কিনা – তা নিয়েও অনেকরকম কথা আছে।
প্রসঙ্গত, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু একটি রিট পিটিশনের রায়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। জামায়াত তাদের নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সেটি এখনও নি®পত্তি হয়নি।
এরকম বাস্তবতায় গত ০২ জুলাই বাংলা ট্রিবিউনের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল: ‘নিবন্ধন পেতে আদালতের ওপর ভরসা রাজনৈতিক দলগুলোর।’ খবরে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে উচ্চ আদালতের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। ইসির শর্ত পূরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবেদন করলেও প্রায় সবাই ব্যর্থ হচ্ছে নিবন্ধন সনদ পেতে। তবে ইসিতে অযোগ্য বিবেচিত এসব দলের কয়েকটি ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের মাধ্যমেই নিবন্ধন পেয়েছে। ইসির নিবন্ধন পাওয়া সর্বশেষ ৫টি দলের সবগুলোই নিবন্ধন পেয়েছে আদালতের আদেশে। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। সবশেষ আরও ৯৮টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মতো আয়তনে ছোট্ট এবং এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশে কতগুলো রাজনৈতিক দল প্রয়োজন? এই যে এত এত দল, তাদের জনভিত্তি কতটুকু? কয়টি দলের নাম মানুষ জানে? যারা এসব দলের সঙ্গে যুক্ত, সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, সিপিবি, জাসদ ও বাসদের বাইরে খুব বেশি দলের নাম সাধারণ মানুষ জানেও না।
আবার ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে চরমোনাই পীরের দল ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনও দল সেভাবে আলোচিত নয়। বরং জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য অনেক দলের প্রার্থীর জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও এত এত দল কেন গড়ে ওঠে এবং তারা কেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে? আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দল একাই যেখানে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা রাখে, সেখানে তারাও বা কেন অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট দল নিয়ে জোট গড়ে তোলে?
বস্তুত রাজনীতি একটা বিরাট ব্যবসা। দল ছোট হোক আর বড়; পদ-পদবি বিক্রি হয় মোটামুটি সব দলেই। টাকা দিয়ে দলীয় পদ কিনে ওই পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করা সহজ। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যায়। আবার ছোট দল হলেও বড় দলের আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেওয়া যায়। বড় দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে ভবিষ্যতে বড় নেতা হওয়া, এমপি এমনকি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ারও স্বপ্ন দেখা যায়।
যেহেতু বড় দলগুলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে বড় জোট গঠন করে নিজেদের ক্ষমতার প্রদর্শন করে, ফলে সেই জোটে যুক্ত হয়ে বড় দলের শরিক বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ পরিষ্কার করা যায়। আবার অপেক্ষাকৃত ছোট দল হলে তারা নিজেরা না জিতলেও শরিকদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। এরকম নানা সমীকরণ কাজ করে ছোট ছোট দল গঠনের পেছনে।
বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মানুষের খুব সাধারণ ধারণা বা অভিযোগ হলো, ভালো মানুষেরা রাজনীতিতে আসেন না। ফলে খারাপ মানুষেরা সেই শূন্যতা পূরণ করেন। এরকম বাস্তবতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে যখন গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলো, তখন অনেকের মনেই আশার সঞ্চার হয়েছিল যে, এই দলটি হয়তো রাজনীতিতে নতুন কোনও সম্ভাবনা তৈরি করবে। কিন্তু পরবর্তীতে নানা ঘটনপ্রবাহ, বিশেষ করে প্রধান দুই নেতার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে দলটি কার্যত ভেঙে গেছে। ফলে এই দলটি স¤পর্কে মানুষের মনে যে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি খুব দ্রুতই ভঙ্গ হয়ে যায়।
গণঅধিকার পরিষদ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরির কারণ ছিল এই যে, এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল হক নুর, যিনি দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এবং যিনি সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে সারাদেশে আলোচিত হয়েছিলেন। বলা হয়, শিক্ষিত তরুণরা রাজনীতিতে আসছে না বা আসতে চাচ্ছে না। এরকম বাস্তবতায় অনেকে ধারণা করেছিলেন, যেহেতু নুরের সঙ্গে অনেক শিক্ষিত তরুণ যুক্ত হয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে রয়েছেন রেজা কিবরিয়ার মতো এমন একজন মানুষ, যিনি বিদেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়েছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি করেছেন, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন; যার শরীরে শাহ এএমএস কিবরিয়া মতো একজন মানুষের রক্ত বইছে, তাদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি রাজনীতিতে হয়তো একটি গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু সেই আশায়ও গুড়েবালি। দেখা গেলো, রাজনীতির চিরাচরিত পথেই হেঁটেছেন এই দলের নেতারাও। অতএব যা হবার তা-ই হয়েছে। এসব কারণে যে প্রশ্নটি বারবার সামনে এসেছে তা হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে ভিন্ন ধারার এমন কোনও রাজনৈতিক দল কি আদৌ গড়ে উঠবে না, যারা সত্যিই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করবে? যারা সত্যিই দেশকে এগিয়ে নেবে? যাদের
হাতে সত্যিই দুর্নীতি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর হবে? যারা সত্যিই বাংলাদেশকে একটা কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে?
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রধান দুই ধারার বিপরীতে বাংলাদেশে অন্য দুটি ধারার রাজনীতির চর্চা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান ধারাটি ধর্মভিত্তিক বা ইসলামি রাজনীতি। দেশে এ মুহূর্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামীসহ আরও অনেক দল সক্রিয়। দ্বিতীয় ধারাটি বাম রাজনীতি। সিপিবি, জাসদ, বাসদসহ অনেকগুলো বামপন্থি দল বাংলাদেশে সক্রিয়। কিন্তু তাদের জনভিত্তি ও জনপ্রিয়তা ইসলামি দলগুলোর চেয়ে অনেক কম। তার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণও আছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, প্রধান দুই ধারার বাইরে এই দলগুলোও যে রাজনীতিতে খুব বেশি গুণগত পরিবর্তন আনতে পেরেছে বা পারছে, তা নয়। উপরন্তু এইসব দলের অনেক নেতা ও নীতিনির্ধারকের ব্যক্তিগত জীবন স¤পর্কে এমন সব কথা শোনা যায়, যা মানুষকে আশাহত করে।
ফলে বাংলাদেশে কতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, কতগুলো দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত, কতগুলো দল নিবন্ধিত হওয়ার জন্য পাইপলাইনে আছে, কারা কারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে – এসব একটি দিক। মূল প্রশ্ন হলো, রাজনীতি আসলে কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন? কারা রাজনীতে আসছেন? কারা মানুষকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন? তারা নিজেরা কি ওই স্বপ্ন বুকে ধারণা করেন? তাদের দ্বারা দেশের রাজনীতিতে আদৌ কোনও গুণগত পরিবর্তন বা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব? এই প্রশ্নটা পঞ্চাশ বছর আগে যেমন ছিল, এখনও আছে। হয়তো আরও অনেক দিন থাকবে।
তাহলে কি রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আদৌ সম্ভব নয়? নিশ্চয়ই সম্ভব। সেজন্য যারা সত্যিই দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষের প্রতি যাদের মমত্ব আছে, যারা বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের অর্ধেক গ্লাস খালি হলেও বাকি অর্ধেক পূর্ণ এবং সেই বাকি অর্ধেক বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূর্ণ করার মতো মেধা-যোগ্যতা-দক্ষতা ও আন্তরিকতা তাদের রয়েছে, সেইসব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কথা বলতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে। চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
রাষ্ট্র কখনও নাগরিকের কাছ থেকে ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন চায় না, বরং সে চায় নাগরিকরা শুধু তার প্রশংসা করবে। ফলে সে যাতে প্রশ্ন করতে ভয় পায়, সেজন্য নানাবিধ ব্যবস্থা তৈরি করে রাখে। কিন্তু সেই পরিস্থিতির ভেতরেও প্রশ্ন করার সংস্কৃতি জারি রাখতে হবে। ভালো মানুষের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে খারাপ মানুষেরা যাতে গ্লাসের বাকি অর্ধেকটা ময়লা পানি দিয়ে ভরে ফেলতে না পারে, সেজন্য সতর্ক পাহারা দিতে হবে।
লেখক: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com