মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
“সাড়ে তিন একর জমি ছিল কিন্তু সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শেষ আশ্রয় ভিটেবাড়িও নদীতে চলে যাচ্ছে। অন্য কোথাও জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘরেই আছি।”
অশ্রুসিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন দোয়ারাবাজারে উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী (৭৩)। তাঁর মতো আরও অনেকে সুরমা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধার উস্তার আলী আরও বলেন, সুরমা নদীর বুকে অর্ধেক ঝুলে থাকা ঘরে ১৫ সদস্য নিয়ে বসবাস করছি। গত কয়েক বছরে অব্যাহত ভাঙনের ফলে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সম্প্রতি ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলে ইতোমধ্যে বসতবাড়ির উঠোন চলে যায় নদীগর্ভে। ঝুলন্ত ঘর ভেঙ যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা উস্তার আলী হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে নদী ভাঙছে। ভাঙনরোধে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ কতোজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। সোমবার দুপুরে ভাঙনের শব্দে ঘুম থেকে জেগে দেখি বারান্দার মাটি নদীতে চলে গেছে। নতুন ফাটল দেখা দিয়েছে বসতমাটিতে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে নদী ভাঙনের সংবাদ প্রকাশিত হলে জালালপুর জামে মসজিদ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু আমার বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেলেও এর প্রতিকারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। আমার পরিবারের অনেককে আগেই অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছি। আমি পৈতৃক ভিটা ছাড়বো না। এখানেই মরতে চাই। তিনি বলেন, নদী ভাঙন থেকে আমাদের রক্ষায় এখনই উদ্যোগ না নিলে, আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে, একইভাবে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে জালালপুর গ্রামের রাজু মিয়া রাসুর অটো রাইস মিলসহ নানা স্থাপনা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে জালালপুর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জের এসডিও সমশের আলী মন্টু বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে আমরা জালালপুর জামে মসজিদ ভাঙন প্রতিরোধে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার বসতভিটায়ও জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।