শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। প্রতিদিন কোন না কোন গ্রামে হানা দিচ্ছে চোরের দল। অব্যাহত চুরির ঘটনায় কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক মাসে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, দিরাই, জগন্নাথপুর, সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ৪০-৫০টি গরু চুরি হয়েছে বলে জানা যায়।
গত ২৯ এপ্রিল দিবগত রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের একটি ষাঁড় চুরি হয়ে যায়। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা। গোয়ালঘরের তালা ভেঙে ষাঁড়টি চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরচক্র। অনেক দিনের কষ্টে লালন-পালন করা ষাঁড়টি চুরি হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন কৃষক নজরুল ইসলাম।
জানাগেছে, গত এক মাসে শান্তিগঞ্জের পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে অন্তত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গরু চুরি হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুলের। এক রাতে তাঁর পাঁচটি গরুসহ এলাকার ৭টি গরু চুরি হয়ে যায়। এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ থানায় জিডি করা হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি গরুগুলো।
পূর্ব বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল বলেন, গেল এক মাসে আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অনন্ত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। আমার নিজের ৫টি গরু চুরি হয়েছে। গরু চুরির ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। গৃহস্থরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার মতো জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গরু চুরির সংবাদ পাওয়া গেছে। কষ্টে লালিত গরু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন অনেক ক্ষুদ্র কৃষক। এদিকে গরু চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পাহারাদার রাখা হয়েছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না গরু চুরি।
ভুক্তভোগীরা জানান, গরু চুরির সাথে একদল প্রশিক্ষিত সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত রয়েছে। চুরি হওয়া গরু দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করে বিক্রি করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিলেট, সুনামগঞ্জ শহরের একাধিক কসাইখানায় চুরি হওয়া গরু জবাই করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনিক নজরদারি বাড়লে চুরি হওয়া গরু উদ্ধার সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা জহুর আলী বলেন, গেল দুই সপ্তাহ বড়পাড়ার চারটি গুরু চুরি হয়েছে। কোনটা হাওর থেকে, আবার কোনটা রাতের আঁধারে গোয়ালঘর থেকে চুরি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গরুগুলো গায়েব হয়ে যায়। গরু চুরির যেভাবে বেড়েছে কৃষকরা খুব ভয়ে রয়েছে। বিড়ম্বনার কারণে গৃহস্থরা থানায় জিডিও করছেন না।
এদিকে গরু চুরি ঠেকাতে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে সুনামগঞ্জের পুলিশ বিভাগ। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদারসহ নজদারি বাড়ানো হয়েছে। গরুচোরের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিপন কুমার মোদক বলেন, যেখানেই গরু চুরির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই আমাদের টিম কাজ করছে। অভিযোগ না পেলেও গরু চুরি ঠেকাতে আমাদের টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। গরুচোর শনাক্তে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। চুরি হওয়া গরু উদ্ধারেও পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।