স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে ও পায়ের নখ তুলে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নিহত সাকিব রহমানের বাবা মুজিবুর মিয়া মঙ্গলবার রাতে তাহিরপুর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি তাহিরপুর কয়লা আমদানি গ্রুপের সাধারণ স¤পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন তালুকদার। অন্য আসামিরা হলেন মহিনুর তালুকদার, মোশাহিদ তালুকদার, মোনায়েম হোসেন রাজু, রফি তালুকদার, নূরুজ আলী, আব্দুল কাহার, আব্দুল বাহার, পটল তালুকদার ও শামসু মিয়া।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের উল্লাসের মোড় থেকে সাকিব রহমানকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে, নখ তুলে হত্যা করে একদল লোক। সাকিব রহমান (২৫) ঘাগটিয়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের মুজিবুর মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন তালুকদারের পূর্ব বিরোধ ছিল। এর জের ধরে কয়েক বছর আগে মুজিবুর রহমানের ছেলে সাকিব রহমানকে নির্যাতন করে একদল লোক। ২০১৯ সালে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ ও নিহতের বাবা মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাতে বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের উল্লাসের মোড় থেকে সাকিব রহমানকে তুলে নিয়ে যায় ১০-১২ জন লোক। তারা মোশারফ হোসেন তালুকদারের বাড়িতে নিয়ে বেদম মারধর করে তাকে। এতে অজ্ঞান হয়ে গেলে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। এক পর্যায়ে পায়ের নখ তুলে নেয়।
গভীর রাতে খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে তার বাবা মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন তালুকদারের বাড়ি গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেয়। এরপর তিনি পালিয়ে আসেন। সকালে খবর পান তার ছেলে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছে। সেখান থেকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও পরবর্তীতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়; কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।
সাকিবের বাবা মুজিবুর রহমান বলেন, মোশারফ হোসেন তালুকদার এলাকার একচ্ছত্র প্রভাবশালী। তার বাহিনী তার নির্দেশে তার ছেলেকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে পায়ের নখ তুলে হত্যা করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে তারা সাকিবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছিল এবং তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
মুজিবুর রহমান আরও জানান, স¤প্রতি মোশারফ হোসেন তালুকদারের ভাই মোশাহিদ তালুকদারের সঙ্গে সাকিব রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সোমবার রাত ১১টার দিকে মোশারফ তালুকদারের ভাইসহ অন্তত ১০ জন ঘাগটিয়া উল্লাসের মোড় থেকে জোরপূর্বক সাকিবকে ধরে নিয়ে যান মোশারফ হোসেন তালুকদারের বাড়িতে। সেখানে নিয়ে তার উপর চালানো হয় প্রচ- নির্যাতন।
এ ব্যাপারে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, যুবককে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় দশজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।