প্রতিদিন পত্রিকায় বিভিন্ন সংবাদ ছাপা হয়। তার পূর্ণ ফিরিস্তি উপস্থিত করা কারও পক্ষেই কখনও সম্ভব নয় এবং তার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে প্রতিদিনকার নির্দিষ্ট কতিপয় সংবাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে সেটা নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ লেখা উপস্থাপিত করা সহজেই সম্ভব এবং যেতেই পারে। লেখা যেতে পারে, সেগুলো কতোটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক এবং সেগুলোর ফাঁরাফাৎ (ফাঁরাক+তফাৎ) বিবেচনায় এনে কেউ কেউ দেশের ভালোমন্দের অবস্থা নির্ণয় করেও ফেলতে পারেন। এমনটা হতেই পারে এবং এই বিবেচনাটাকে একেবারে ফালতু বলে উড়িয়ে দেওয়ার পেছনেও বোধ করি কোনও যৌক্তিকতা নেই। নেতিবাচক সংবাদগুলোতে তো থাকেই, এমনকি অনেক সময় আপাত ইতিবাচক সংবাদগুলোর ভেতরেও নেতিবাচকতা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে, পাঠকের অনেকেই সেটা উপলব্ধিতে নিতে পারেন না, হয় তো গভীরভাবে ভাবেন না বলেই। এদিক থেকে বিবেচনায় সংবাদের নির্গলিতার্থ কিংবা তাতে সামাজিক, রাজনীতিক ও আর্থনীতিক যে-বার্তা পাঠকের জন্যে নিহিত বা পরিবেশিত হয় একটু খেয়াল করইে যে-কোনও পাঠক সেটা উপলব্ধিতে নিতে পারেন বা পারবেন অনায়াসে।
গত শুক্রবার (৩১ মার্চ ২০২৩) স্থানীয় একটি পত্রিকার কয়েকটি সংবাদ শিরোনাম ছিল এরকম : ‘হাটেবাজারে যেমন খুশি দামে বিক্রয় হচ্ছে ব্রয়লারের মুরগি’, ‘ব্রয়লার মুরগির সিন্ডিকেটকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি’, ‘আইন না মানলে জরিমানা করা হবে’, ও ‘নদী খননে নিরাপদ ডাম্পিং ব্যবস্থা গড়ে তুলুন’। যে-কোনও বিবেচনায়ই এই সংবাদগুলোর প্রত্যেকটিই বর্তমান সমাজসংস্থিতির নেতিবাচকতাকে নির্দেশ করে। কিন্তু তারপরেও এগুলোর অন্তর্গভীরের দ্যোতনা হালকাভাবে হলেও ইতিবাচকতার ইঙ্গিত বাহিত। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সংবাদগুলো পাঠকদেরকে একটি বার্তা দেয়। আর সে-গুরুত্ববহ বার্তাটি হলো, বর্তমান সমাজসংস্থিতির চলিতকর্মের পরিসরে সংবাদে পরিবেশিত ঘটনার মতো এইরূপ লঙ্কাকা- ঘটতেই থাকবে যদি না অখ- আর্থসামাজিক ব্যবস্থাটির আমূল পরিবর্তন ইতিবাচকতাকে নিশ্চিত করে। জরিমানা প্রকারান্তরে দাম না কমিয়ে বরং দাম বাড়িয়ে দেবে এবং বাড়তি টাকাটা জনসাধারণের পকেট থেকেই ব্যবসায়ীর হাতে যাবে, মুনাফা নির্ভর পুঁজিবাদী এই প্রবণতাটিকে সমাজব্যবস্থাকে পাল্টে না দিয়ে কীছুতেই থামানো যাবে না। আর এই পরিবর্তনটা কেবল হতে পারে বিদ্যমান অর্থনীতির, আরও সুনিশ্চিত করে বললে বলতে হয়, বিদ্যমান সমাজসংস্থিতির পরিসরে প্রতিষ্ঠিত সম্পদের উপর ব্যক্তিমালিকানার প্রপঞ্চ (সমাজবাস্তবতা) থেকে সামাজিক মালিকানায় বৈপ্লবিক উত্তরণ সম্ভব হলে। সমাজের সকল মানুষের নিরন্তর সুখ, শান্তি ও মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ নিশ্চিত করার স্বার্থে অবশ্যই সমাজকে এই উত্তরণের পথ ধরেই চলতে হবে।