1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের ফসলরক্ষায় সঠিক পথে হাঁটতে হবে

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩

 

রমেন্দ্র কুমার দে

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭টি জেলা নিয়েই হাওরাঞ্চল। ভারতের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড় যা বর্তমানে মেঘালয়, সেটির পাদদেশে এই অঞ্চল অবস্থিত। এক সময়ের কালিদহ সাগর কালের পরিক্রমায় আজ হাওরাঞ্চল। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলি ও বালুতে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে বর্তমানে এই রূপ ধারণ করেছে। অতীতের খর¯্রােতা সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা নদী এখন আর আগের অবস্থায় নেই। সেই ¯্রােত, সেই ঢেউ আর এসব নদীতে এখন দেখা যায় না। নদীর নাব্যতা কমেছে। কমেছে পানির ধারণ ক্ষমতা। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি উপচে ঢুকে পড়ে হাওরে। তলিয়ে যায় বোরো ধান। সর্বনাশ হয় লাখো কৃষকের। আর বর্ষায় যখন বন্যা দেখা দেয়, তখন পুরো অঞ্চলের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। থই থই পানিতে তখন টইটুম্বর থাকে চারদিক। লোকজন ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়। নিরাশ্রয় হয়ে আশ্রয়ের খুঁজে ছুটতে হয় মানুষকে। গত বছরের জুন মাসে সুনামগঞ্জ-সিলেটে তীব্র বন্যার আঘাত এরই অনিবার্য পরিণতি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের আমল থেকে নদী খনন ও পূর্ব বাংলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জোরালো দাবি ছিল।

ফসল হারানোর মাশুল গুনতে হয় কৃষকদের :

প্রতি বছর ফসল তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক নিয়েই হাওরে বোরো ফলিয়ে থাকেন চাষিরা। কমবেশি প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢলে ফসল নষ্ট হয়। কোনো কোনো বছর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কৃষকদের ক্ষতি তো হয়ই, অন্যদিকে দেশের খাদ্য উৎপাদনেও বিরাট প্রভাব পড়ে। এক ফসলি কৃষকেরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অভাব-অনটনের মধ্যে দিন যাপন করতে হয় তাদের। তখন ঠিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা ও ঋণের বোঝা টানতে হয়। এতে করে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এভাবে অনেকেই কৃষি কাজ ছেড়ে শহরের দিকে আসতে থাকে। অন্যভাবে বেঁচে থাকার আশায় একে একে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে যান। কেউ ক্ষেত মজুর, কেউ দিন মজুর হন। শহরে এসে রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা চালান, দোকান কর্মচারী, ফেরিওয়ালা হন। বাসা-বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সন্তানের লেখাপড়া, চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন।

ফসল রক্ষায় বরাদ্দ ও দুর্নীতি :

প্রতি বছর বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য সরকার থেকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বছর সুনামগঞ্জের হাওরগুলিতে ১ হাজার ৭৮টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। বছর বছর প্রকল্প আরও বরাদ্দ বাড়ছে। দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব বাঁধের সঙ্গে ফসলের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ফসলরক্ষা বাঁেধর নামে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যেই বাঁধের কাজে ঢিলেমি করে কাজ পেছানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়া করে বাঁধের কাজ শেষ দেখানো হয়। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বাঁধগুলো দুর্বল হয়। পুরাতন বাঁধ যেগুলো তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, যা সামান্য মেরামতের কাজ করলেই চলে সেগুলোতেও পূর্ণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাওরে এসে ৫০ভাগ কাজের স্থলে ৮৫ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে যান। এতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পক্ষে থাকলে বিল পেতেও অসুবিধা হয় না। গত ৪ মার্চ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী হাওরে বাঁধের কাজ দেখতে আসেন। অবশ্য তাঁর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়। উপমন্ত্রী সেদিন ঘোষণা দেন ৭ মার্চের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে। ওইদিন পাউবোর দাবি ছিল বাঁধের কাজ ৮৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তখন হাওর আন্দোলনের নেতারা বলেন, কাজ হয়েছে ৫০ ভাগ।

কাজের নীতিমালা না মানায় দুনীতি হয় :

সমস্যা কোথায়? সরকার অর্থ বরাদ্দ কম দিচ্ছে না! একদিকে জবাবদিহি নাই, অন্যদিকে যারা এ কাজের মূল দায়িত্বে থাকেন সূত্রপাতটা হয় তাদের তরফ থেকেই। যারা প্রকল্প নির্ধারণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করেন তাঁরা নীতিমালা বা সরকারি নির্দেশনা পালনের চেষ্টাও করেন না। নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করতে হবে। এরপর কাজ শুরু হবে ১৫ ডিসেম্বর। কাজ শেষ করতে হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এর কোনোটিই সময় মতো হয় না। প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের ক্ষেত্রে কার্যত, এলাকার কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তি এতে যুক্ত হয়ে পড়েন। তারা প্রতি বছরই কোনো না কোনোভাবে পিআইসিতে ঢুকে পড়েন। গণশুনানি করে হাওরের প্রকৃত কৃষক যাদের স্বার্থ জড়িত তাদের নিয়ে এসব কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা গণশুনানি না করেই অফিসে বসে পিআইসি গঠন করেন।

সমাধান :

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের প্রকল্প ও পিআইসি’র তালিকা প্রস্তুত করে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দিতে হবে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এসব প্রকল্প ও পিআইসির বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি, অভিযোগ থাকলে যাচাই-বাছাই করে সেটি নিষ্পত্তি করতে হবে। বাঁধের কাজের শুরুতেই প্রতিটি প্রকল্পের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানো প্রয়োজন। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে হবে। সময় মতো বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বাঁধ দুর্বল হয়ে থাকে। পাহাড়ি ঢল আসলে এসব দুর্বল বাঁধ পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে সহজেই ভেঙে যায়। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাওরে শত শত বাঁধ দেওয়া কোনো সমাধান নয়। এতে টাকার যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের। এ জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। নদীগুলির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নদী খনন ছাড়া শুধু ফসল রক্ষা বাঁধ দিয়ে হাওরগুলির বোরো ফসল রক্ষা করা যাবে না। বাঁধের পাশাপাশি নদী খননকে গুরুত্ব দিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ না করে এই টাকা নদী খননের কাজে লাগাতে হবে। আবার নদী খনন নিয়ে নানা কথা আছে। এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজে নৌবাহিনীকে যুক্ত করা যেতে পারে। বর্ষায় যখন নদীতে স্রোত থাকে তখন ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করলে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। এবং পলি নদীতে না জমে ভাটির দিকে চলে যাবে। কোনো অবস্থায়ই হাওরে সড়ক নির্মাণ কিংবা ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ করা যাবে না। সর্বক্ষেত্রে হাওর থেকে পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

[রমেন্দ্র কুমার দে, উপদেষ্টা, হাওর বাঁচাও আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি]

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com