ধর্ষণ প্রকৃতপ্রস্তাবে বাংলাদেশে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিকারের দাবি উঠলেও যথার্থ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া মিলছে না, নির্বিঘেœ ভুক্তভোগীর দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে, সমাজ প্রতিকারের উদ্যোগ নিচ্ছে না, উল্টো ধর্ষকের পক্ষাবলম্বন করছে এবং পারতপক্ষে পক্ষাবলম্বন করতে না পারলে উদাসীন থাকছে। দেশের ভেতরে ধর্ষণপ্রবণতা আগেও ছিল এবং এখনও আছে এবং বর্তমানে গণমাধ্যমে ধর্ষণের সংবাদ অধিক হারে প্রকাশ হওয়ায় কারও কারও মনে হতে পারে দেশে ধর্ষণপ্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছ, এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা আর একটি স্বাভাবিকতাকে প্রতিপন্ন করে যে, বাংলাদেশ একটি ধর্ষণপ্রবণ দেশ। পুরুষতান্ত্রিক এই দেশে ধর্ষণ একটি স্বাভাবিক পুরুষাচরণ। এমন সিদ্ধান্ত টানার কারণ আছে।
গত সোমবার (১৩ মার্চ ২০২৩) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, শুক্রবার (১০ মার্চ ২০২৩) সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজারের বাঁশতলা গ্রামের ১১ বছরের একটি মেয়েকে ২০ ও ২২ বছর বয়সী দুই যুবক মিলে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণোত্তরকালে স্থানীয় মাতব্বররা ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় না-নিতে বাধ্য করেন এবং প্রকারান্তরে পরিবারটি উৎসাহদানকারী স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে আইনি আশ্রয় নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে থানা কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন এবং ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাস্তবে যা ঘটেছে সেটা প্রকাশ্য আচরণের দিক থেকে এমনই সাদাসিদে। কিন্তু অন্তর্গতভাবে আসলেই কি সাদাসিদে? মোটেও তা নয়।
এই সাদাসিদে ঘটনার ভেতরে ভয়ঙ্করভাবে ধর্ষণপ্রবণ সমাজের মুখোশআঁটা মুখ ঢাকা পড়ে আছে। ধর্ষকদের মা-বাবা, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রামের সকলেই এই ধর্ষণের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। এমন কি আইনও অভিযোগ প্রাপ্তির আইনি বাহানার অজুহাতে অনেকটাই নির্বিকার। কেউই প্রতিবাদী হয়ে উঠছে না, নীরব থেকে ‘নীরবতা সম্মতির লক্ষণ’-এর বার্তা প্রচার করছে।
এই স্থবির সমাজের সাংস্কৃতিক বদল চাই। বাইরে বিবাহবহির্ভূত যৌনাচারকে রহিত করে ভেতরে বিবাহবহির্ভূত যৌনাচারের এই চর্চার অবসান করতে না পারলে এই সমাজে নারী ধর্ষণের শিকার হবেই, প্রতিহত করা যাবে না কীছুতেই। প্রকৃতপ্রস্তাবে ধর্ষণসংক্রান্ত আইনকে আরও কঠোর করা প্রয়োজন অথবা সমাজে কানীন সন্তানের স্বীকৃতিকে উচ্চমর্যাদা প্রদান করার আইন প্রবর্তন করাই হবে এর একমাত্র প্রতিকার।