মিছিলটি ছিল ব্যতিক্রমীÑ সত্যিকার অর্থেই। একুশে ফেব্রুয়ারিতে এমন মিছিল বোধ করি এই প্রথমবারের মতো হয়েছে। দেশের কথা জানি না, তবে সুনামগঞ্জে এমনটি হয়ছে বলে শোনা যায় নি। মিছিলটির সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছে, ‘শতকণ্ঠে প্রতিবাদী মিছিল করে একুশে উদযাপন’। সংবাদবিরণীর শুরুতে ‘আজ মিছিলের বন্যা হবে, এই মিছিল সবহারার সবপাওয়ার এই মিছিল’ কবিতার মতো এই কথা তোলে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘এমন সব প্রতিবাদী কবিতা উচ্চারিত হচ্ছিল শতকণ্ঠে। […] একুশের বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরে ছিল এমন দৃশ্য।’
বিষয় বঞ্চনার, বিষয় প্রাপ্তির। সমাজের একাংশের মানুষ অন্য অংশের মানুষকে বঞ্চিত করেছে। বঞ্চনার ঘটনা ঘটেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অর্থনীতির ভাষায় উদ্বৃত্তমূল্য চুরি হয়েছে, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান আকাশ পাতাল হয়ে উঠছে। ঠেলাগাড়ি বা রিকসা চালায় যে তার দৈনিক আয় বড়জোর ৩০০ টাকা আর একজন ঘুষখোর অথবা ব্যবসায়ীর দৈনিক আয় লক্ষ থেকে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়Ñ ব্যক্তিআয়ের এতোটাই ব্যবধান। অনেক আগেই এই দেশে ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’ স্লোগান উঠছে। বিশ^ব্যাপী পুঁজির প্রভুত্ব-দৌরাত্ম্য এইসব করে চলেছে এবং এমনকি যুদ্ধ বাঁধাচ্ছে। যেমন ইউক্রেইন যুদ্ধ হচ্ছে পুঁজির মুনাফাকে বাড়ানোর জন্যে। পুঁজিপতিদের আরও টাকা চাই।
কেউ যদি কেবল নেয় দেয়না কীছুই, তাহলে সে সেটা নেয় কারও না কারও কাছ থেকে। পুঁজির স্বভাবই এমন কেবল নেয় দেয় না কীছুই। যার থেকে নেয় তার থাকে না কীছুই, সে সর্বহারা হয়ে যায় এবং সর্বহারার কেবল পাওয়ার আছে, হারাবার কীছু নেই। এই সবহারাদের জীবনের দাবির কথা বলা হয়েছে, গত সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের সড়কে সড়কে ঘুরে একুশে ফেব্রুয়ারির মুখর মিছিলে। এই মুখরতা কবিতায় কবিতায় ও স্লোগানে স্লোগানে বলেছে পৃথিবীর সবহারাদের কথা, তাদের সবপাওয়ার দাবির কথা।
দাবি উঠছে, পুঁজি সেটা ঠেকাতে পারছে না। কিন্তু কথা হলো এই সবপাওয়ার পৃথিবী বানাতে হলে, পৃথিবীকে পাল্টে দিতে হবে, পাল্টাতে হবে গোটা সমাজসংস্থিতি বা সমাজকাঠামোটাই। পুঁজির দৌরাত্ম্যকে উৎখাত করতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। সব সম্পদের মালিকানা সমাজের মালিকানায় ফেরত পাঠাতে হবে, যেমন একদা আদিমকালে সম্পদের মালিকানা ছিল সমাজের, ব্যক্তির কোনও মালিকানা ছিল না। কাজটা এতো সহজ নয়। সেই কঠিন কাজের কথার আপাতত এখানেই ইতি টানছি। সম্পাদকীয়তে তার ফিরিস্তি দেওয়ার কোনও অবকাশ নেই। কেবল বলি, সবহারাদের কথা নিয়ে, সবপাওয়ার দাবি নিয়ে মিছিল শুরু হয়েছে। এই মিছিল চলবে, মিছিল চলবেই।