‘চাঁদা না দেওয়ায় এস্কেভেটরের মালামাল ও তেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা’ এবংবিধ একটি সংবাদ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে গত রোববারে (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। ঘটনাটি ঘটেছে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের বর্ধিত গুরমার হাওরের ৩৫ নং প্রকল্পে। চাঁদাবাজরা প্রকল্পের শুরু থেকেই প্রকল্পের সভাপতির কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করছিল। টাকা না পেলে তারা সরকারি খাস জমি থেকে মাটি কাটতে দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছিল। অবশেষে গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) দুপুরে ৪ দুর্বৃত্ত প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মতো মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
সত্যি চমৎকার ঘটনা! সিনেমার ঘটনার সঙ্গে তুলনীয়। কোনও কোনও সিনেমায় দুর্বৃত্তরা এতোটাই প্রবল হয়ে উঠে যে, আইনের লোকের সামনে খুন, ধর্ষণ, লুট ইত্যাদি যাচ্ছেতাই করে দিব্যি পার পেয়ে যায়। হাজার লোকে খুনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেও কিচ্ছু হয় না। বিচারের বাণী সব সময় নীরবে-নিভৃতে কেঁদে চলে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, সমাজসংস্থিতির পরিসরে কী ঘটে চলেছে ? এর ব্যাখ্যা কী ? কারণ কী ?
প্রকৃতপ্রস্তাবে মুক্তবাজার অর্থনীতির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠা সমাজসংস্থিতির পুরোটাই দুর্নীতিবাজদের দাসে পর্যবসিত হয় এবং সেটার বিস্তৃতিও রাজধানীর কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত গ্রামান্তর পর্যন্ত প্রলম্বিত। আর এর পেছনে একটাই কারণ, কীছু অর্থলোভী মানুষের বিত্তশালী হওয়ার বাসনার সঙ্গে ওতপ্রোত প্রভুত্বস্পৃহাÑ মানুষের উপর খবরদারি করে পরশ্রমে উৎপন্ন বিত্ত আত্মসাৎ করা। এইসব দুর্বৃত্তদের সঙ্গে যুক্ত থাকে স্বার্থান্বেষী শিক্ষিত শয়তানদের নিয়ে গড়ে উঠা শক্তিশালী চক্র। ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। শত অত্যাচারেও নীরব থাকে। এমতাবস্থায় প্রতিবাদী নায়ক আসে এবং দুর্বৃত্তদের সঙ্গে লড়াই করে জিতে যায়, সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হয়। আমাদের সমাজটা এরকমই দুর্র্বৃত্তায়িত একটি সমাজ। তফাৎ কেবল একটাই। আর সেটা হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠার নায়কের অনুপস্থিতি। সুতরাং ফাঁকা মাঠে অত্যাচার আর বিপুলসম্পদ আত্মসাৎ অব্যাহত আছে দুর্বার গতিতে। তারই একটি একেবারেই ক্ষুদ্র কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলো দুবর্ৃৃত্ত কর্তৃক ‘চাঁদা না দেওয়ায় এস্কেভেটরের মালামাল ও তেল নিয়ে’ যাওয়ার ঘটনা। বড় ঘটনার উদাহরণ দিতে গেলে বলতে হয় এখানে একটি বালিশ দুতলায় উঠানোর পারিশ্রমিক দেখানো হয় ৫ হাজার টাকার বেশি কিংবা দশ-পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা বছরের পর বছর ঘুরে বেড়ায়, বিপরীতে পাঁচ হজার টাকার ঋণখেলাপি কৃষককে কারারুদ্ধ করা হয়। এবংবিধ কা-কারখানা সর্বজনবিদিত।
এই দুর্বৃত্তায়নের প্রতিরোধ চাই। সমাজের সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে একযোগে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে না এলে এই নির্যাতন ও নির্যাতনের ভেতর দিয়ে সম্পদ-আত্মসাৎ ক্রমাগত চলতেই থাকবে, শান্তি কোনও দিনই দেখা দেবে না, অশান্তির নরকে পুড়েই মরতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে।