হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে করা ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, হাওরাঞ্চলে বাঁধের কাজে বিভিন্ন অনিয়ম, গাফিলতিসহ ব্যাপক দুর্নীতি অব্যাহত আছে। তার নমুনা হিসেবে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম তুলে ধরছি : ‘ড্রেজারের বালুতে হচ্ছে ফসলরক্ষা বাঁধ’ (দৈনিক সুনামকণ্ঠ, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩), ‘পিআইসি হাওরে, সাইনবোর্ড দোকানে’ (দৈনিক সুনামকণ্ঠ, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩), ‘হুমকির মুখে মাটিয়ান হাওর/ হাওরের ফসলরক্ষায় বালির বাঁধ’ (দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩), ‘বাঁধের কাজে গাফিলতি করায় পিআইসি সভাপতি আটক’ (দৈনিক সুনামকণ্ঠ, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)।
এরপর হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজে কী লঙ্কাকা- ঘটছে তা অনুমান করতে বুদ্ধি খরচ করতে হয় না। এই জন্যে সমগ্র প্রশাসন, রাজনীতি ও স্থানীয় নেতাদের ঢালাওভাবে দোষারোপ করা অবশ্যই সমীচীন নয়, তাঁরা অবশ্যই ভালো এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। তারও প্রমাণ আছে। একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে গাফিলতি করায় ৪ পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভাপতিকে আটক করা হয়েছে। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের করা জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছেন। সে-সময় এক পিআইসি সভাপতি যথানিয়মে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করায় তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ দুর্নীতি সংঘটন ও দুর্নীতি নির্মূলের প্রচেষ্টা দুটিই অব্যাহত আছে, অপরদিকে এটাও প্রতিপন্ন হচ্ছে যে প্রশাসন, রাজনীতি ও স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতিবিরোধী অংশের দুর্নীতি নির্মূলের শুভপ্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতিও চলছে এবং সেটা জনগণের সকলেই প্রত্যক্ষ করছেন প্রতিনিয়ত। প্রতিষ্ঠিত এই সত্যকেও অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু কথা হলো এই দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করতেই হবে।
হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে দুর্নীতির অনিবার্য ফল ফসলডুবির আশঙ্কা বাস্তব ঘটনায় পর্যবসিত হওয়া এবং ফসলডুবি ঘটলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে, দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রকে তার ধকল সইতে হবে, উন্নয়ন ব্যাহত হবে। একটার পেছনে আরেকটা বিপদ ধাওয়া করে আসবে এবং তখন এই দুর্নীতিবাজরা আবার চক্র গড়ে তোলে স্বার্থোদ্ধারে চক্রান্তের পর চক্রান্ত করে যাবে। প্রশাসন, রাজনীতি ও স্থানীয় বলয়ের ‘ক্লিনইমেজ’-এর নেতাদের নাকের ডগায় দেশের সাদাসিধে ভালো মানুষেরা শোষণ-নির্যাতনের শিকার হতেই থাকবে এবং স্বল্পসংখ্যক – যাকে বলে কেউ কেউ – টাকার পাহাড় গড়বে, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়াবে, জনগণের বাকি বৃহৎ অংশ গরিবি-জীবন বেছে নিতে বাধ্য হবে, মাঝপথে আরেকটি অংশ নিজেরা একটু ভালো আছের সন্তুষ্টি নিয়ে চুপচাপ থাকবে। এইভাবে দেশ চলছে এবং চলতে থাকবে।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা এমনটি ঘটতেই থাকবে যদি না বিদ্যমান সমাজ সংস্থিতির পরিসরে প্রশাসন, রাজনীতি ও স্থানীয় লোকাবলয়ে গড়ে উঠা কাঠামোগত দুর্নীতিবাজ চক্রের অবসান ঘটানো যায়।