1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কবে শেষ হবে বোরো চাষীদের দুর্গতি?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২

রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু
সারাদেশেই কম বেশি বোরো ধানের চাষ হয়। কিন্তু হাওর এলাকার বোরো চাষীদের সমস্যা ভিন্ন। বিশেষ করে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭টি জেলার বোরো ফসল ফলাতে যে দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয় অন্য এলাকার সমস্যা থেকে ভিন্ন। এই সব জেলায় ৪১৪টি হাওরের মধ্যে ৩৭৩টি হাওরের মোটামুটি ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বছর বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ফসল রক্ষা বাঁধের বরাদ্দ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের পথে কোনো মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বৃষ্টি শুরু হয় মার্চ বা এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে। তখনই আশঙ্কা থাকে পাহাড়ি ঢল আসার। দেখা গেছে মাঝে মাঝে দু’এক বছর পাহাড়ি ঢল না হওয়ায় ফসলের ক্ষতি করে না, এতে সে বছর চাষীরা রক্ষা পায়। তার জন্য বসে থাকা যায় না। কাজেই পাউবো ফসলরক্ষা বাঁধের নামে কাজ করে যাচ্ছে কাজও হচ্ছে অপচয়ও হচ্ছে। দুর্নীতি ও অপরিকল্পিত কাজের ফলেই সরকারকে বছর বছর কোটি কোটি টাকা ফসল রক্ষা বাঁধে ব্যয় করতে হচ্ছে। যে সব কারণে হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ব্যয় হতে হয় তার কারণগুলো হল
১. সময় মত বাঁধের কাজ শুরু না করা।
২. পলিভরাট এর কারণে নদীর নাব্যতা দূর না করা।
৩. দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পিআইসি গঠন করা।
৪. বাঁধ নির্মাণে সম্পৃক্ততা ও জবাবদিহিতার অভাব।
৫. অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও দুর্বল স্থানগুলোতে বাঁধের কাজের টেকসই কাজ না করা।

পৌষ মাস বা তার ও কিছু পরে অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত চারা রোপনের কাজ শেষ হয়ে যায় এবং এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত ফসল কাটা চলতে থাকে। বৃষ্টি শুরু হয় মার্চ মাসের শেষদিকে বা এপ্রিল মাসের প্রথমদিক থেকে। তখনই আশঙ্কা থাকে পাহাড়ি ঢল আসার। প্রতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে বাঁধের কাজ শুরুই হয় মার্চ মাসে। দীর্ঘদিন ধরে পলি মাটির দ্বারা নদীগুলো অনেক স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাষনে পানির প্রবাহ কমে গেছে এবং নদীতে যখন পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে এসে, তখন নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে প্রচ- বেগে চাপ দেয়। গত বছর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শনে এসে ১৪টি নদী খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কাজেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কেবল মাত্র বাঁধ দিলেই ফসল রক্ষার কোনো নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।

নিয়ম হলো গণশুনানীর মাধ্যমে পিআইসি গঠন করা। স্থানীয় হাওরবাসীর স্থায়ী বাসিন্দা ও জমির মালিক বা স্বার্থভোগীদের মাধ্যমে গণশুনানীর মাধ্যমে পিআইসি গঠন করা। যাতে স্বার্থভোগীর সমর্থিত লোকজনের দায়িত্ববোধ চাপানো যায়। কিন্তু প্রকল্প নির্মাতারা স্থানীয় মানুষের মতামত ছাড়াই তাদের পাউবো পিআইসি গঠন করেন। স্বার্থান্বেষী ও পিআইসি মিলেমিশে এক ধরনের সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর কাজ করানো হয়। এর বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার জন্য প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। ফসলের ক্ষতি হলেও কোনো জবাবদিহিতা থাকে না।
সময়মত কাজ না করার ফলে বাঁধে মাটি ঠিকমত বসে না, বাঁধ দুর্বল থাকে। দেরীতে কাজ শুরু হলে তাড়াহুড়া করে বাঁধের কাজ শেষ করার প্রবণতা দেখা যায়। শেষে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে শতকরা হিসাবে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার ফিরিস্তি বিবৃতি প্রকাশ করে আশ্বাস বাণী শুনানো হয়।

যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ করে দুর্মুজ দেয়া, দুর্বল স্থানে বাঁধের আঁড় বেঁধে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। এটা না করে জনগণের কোটি কোটি টাকার অপচয় করা, একমাত্র বোরো ফসল নষ্ট করে হাওর এলাকার কৃষকদের নিঃস্ব করে ও দেশের খাদ্য উৎপাদনে পরিমাণ কমার জন্য দায়ীদের যেন একটা ‘ফ্যাশন’ হয়ে গেছে।
ধান উৎপাদন করা এখন কৃষকদের জন্য লাভজনক বিষয় নয়। যারা নিজেরা ফসল ফলায় এর মধ্যে কিছু কৃষক যাদের কিছু নিজস্ব জমি আছে তারা দেশের আর্থিক সংকটের জন্য কৃষিঋণ ছাড়া চাষ করা সম্ভব হয় না। শ্রম, বীজ, সার, সেচসহ অন্যান্য খরচের বিনিময়ে উৎপাদিত ফসল ফলিয়েও উপযুক্ত মূল্য পায় না। এ বছর দেখা যায় যারা জমির মালিক নিজে চাষ করে না, তাদের জমি অন্য কৃষকরা নিতে চায় না। কৃষকের ফলানো ফসল যদি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় তার পরিনাম হল- কৃষকের জীবনে নেমে আসবে সর্বনাশ। জমি থাকলে ঋণ পরিশোধের জন্য জমি বিক্রি করতে হবে নতুবা আরও নতুন করে ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হবে। শিশু সন্তানদের ভবিষ্যৎ লেখাপড়া শেষ। বাল্যবিয়ে দিয়ে মেয়েকে ঘর থেকে বিদায় দিতে হবে। ধীরে ধীরে অভাব অনটনের তাড়নায় নিঃশেষ হয়ে যাবে।

আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ মানুষই কৃষক। সত্যিকার অর্থের দেশের কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তনের কার্যকর কোনো নীতি নেই। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রচ- আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষকদের ঋণ একটা বিরাট সমস্যা। তারপর বীজ, সার, সেচ, ভার্তুকি, বিপণনসহ কৃষকের জন্য সমন্বিত নীতি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

জমির তুলনায় আমাদের দেশের লোকসংখ্যা বেশি। খাদ্য নিরাপত্তা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের তরফ থেকে যতটুকু গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সরকারের কাগজে কলমে খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতা ভিন্ন। ধানের উৎপাদনশীলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন প্রয়োজন যথাযথভাবে কৃষকরা যাতে একশত ভাগ ফলস ঘরে তুলতে পারে তার নিশ্চয়তা ও কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় এবং উৎপাদিত ফসল সরকার কর্তৃক সরাসরি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিয়ে সংগ্রহ করে গুদামজাত করতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রদান করা। হাওর এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় খাদ্য গুদামে ধান পৌঁছানোর ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এসব এলাকায় যেখানে অধিক ধান-চাল সংগ্রহ করা যাবে। সেসব স্থানে কয়েকটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল কৃষকদের ধান খাদ্যগুদামে দিতে এলে তাদের হয়রানি ও নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। এর জন্য কৃষকরা যাতে সহজে ধান দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

দেশের চালের বাজার গুটি কয়েক চালকল মালিক ও বড়বড় ধান ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। তাঁদের ইচ্ছায় চালের দাম ওঠানামা করে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এমনকি সরকারি চাল সংগ্রহও সফলতা নির্ভর করে ওই গোষ্ঠীর ওপর।

কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নিয়ে কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com