গত বৃহস্পতিবারে (১৯ নভেম্বর ২০২২) দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদ প্রতিবেদেনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে খেয়ে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।’ কথাটা আমাদের দেশের সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাবগতিকের সঙ্গে যায় না, এই কারণে একটু ব্যতিক্রমী ধাঁচের। তিনি সেটাকে একটু বিস্তৃত করে আরও বলেছেন, ‘আমাদের দেশে আইন এবং প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। আমাদের মূল সমস্যা হলো পরিবেক্ষণ এবং বাস্তবায়ন। এ ঘাটতিটা আমরা কীভাবে উন্নয়ন ঘটাবো, এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব হচ্ছে সংসদে বিষয়গুলো তুলে ধরা যে, আইন আছে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’ সমস্যাশঙ্কুল বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তব মূল্যায়ন তিনি করেছেন এবং বুঝাই যাচ্ছে যে, উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যন্ত পর্যবসিত হচ্ছে না, সে-বিষয়ে তিনি সচেতন আছেন। তাঁকে ধন্যবাদ। সাধারণত সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনেরা এমন কাঠখোট্টা সত্যোচ্চারণে বড়বেশি উৎসাহ বোধ করেন না।
বুঝাই যাচ্ছে প্রতিমন্ত্রী বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে কিংবা ‘দুর্নীতি’কে ‘পরিবীক্ষণ’-এর অর্থাৎ ‘অভিনিশে সহকারে দর্শন’ করে আইনের কার্যকর প্রয়োগের কথা বলছেন। কিন্তু সংসদ সদস্যদের দ্বারা সেটা সম্ভব হতে পারে অথবা না-ও হতে পারে। সংসদের বাইরে পুঁজিপতিরা সকল সুবিধাকে ক্রয় করার জন্যে টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন, এই পুঁজিপতিদের কাছে দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থটাই বড় ও অগ্রাধিকার পায়। এমতাবস্থায় বিবেচনা করতে হবে আমাদের সংসদ সদস্যদের উক্ত পরিবীক্ষণের ক্ষমতা কিংবা সদিচ্ছা আছে কি-না। সে-বিবেচনা করার সাহস আমাদের নেই এবং সে-যোগ্যতাও আমরা ধারণ করিনা। তবে আমরা দেশের ভেতরে দুর্নীতির রমরমা অবস্থা পরিবীক্ষণ করে থাকি এবং সাধারণ মানুষও তা করে থাকেন এবং দুর্নীতির প্রত্যক্ষ দুর্ভোগে পীড়িত হন এবং তাতে করে প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হয় যে, দুর্নীতি দমনে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্যানুসারে ‘আমাদের মূল সমস্যা পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়ন’ প্রতিনিয়ত যেমন অবহেলিত হচ্ছে তেমনি যথাযথভাবে আইন প্রয়োগের অভাবের ফাঁকে দুর্নীতি দিন দিন বাড়ছে ভয়ঙ্করভাবে।
এক্ষণে আমরা কেবল আশা করতে পারি, প্রতিমন্ত্রী ডা. শামসুল আলম-এর পরিবীক্ষণ ও বাস্তবয়নের মূল্যায়নটি রাষ্ট্র পরিচালকদের দরবারে কীছুটা হলেও মূল্য পাবে। অন্যথায় দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম পরানো যাবে না কীছুতেই এবং এর অনিবার্য ফল হিসেবে জাতিকে আরও বেশি করে ভয়ঙ্কর মাত্রায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।