1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্ভিক্ষ নিয়ে অপপ্রচার বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা নয় কি?

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

:: ফারাজী আজমল হোসেন
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে শুনি কাল্পনিক সব হাহাকার। ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, রিজার্ভ শূন্য, দেশে তেলের কোনও মজুত নেই, গ্যাস শেষ হয়ে গেছে, চুরি করে বিদেশে গ্যাস বিক্রি করে দিয়েছে, বিদ্যুৎ খাতের সব টাকা পয়সা যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়েছে সরকার’- এমন অসংখ্য বক্তব্য ভাসছে চোখের সামনে। কোন মানুষগুলো এই বিষয় নিয়ে আওয়াজ তুলছে সেটিও বেশ ¯পষ্ট। সম্প্রতি তেমনি এক আওয়াজ শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নিয়ে’। খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ একটি দেশ রাতারাতি দুর্ভিক্ষের দেশে পরিণত হবে!
সরকারি-বেসরকারি উভয় তথ্য বলছে, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কোনও সম্ভাবনাই নেই। খাদ্য ঘাটতি অলীক কল্পনা। দেশের অর্থনীতিও স্থিতিশীল। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কেননা, সংকট কবে কাটবে জানে না কেউ।
বিশেষজ্ঞদের সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে কোনও খাদ্য সংকট না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দুনিয়াজুড়ে নতুন করে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকার কথা বলেছে এবং সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সতর্ক থাকছে। করোনার দুর্ভোগ কাটতে না কাটতেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ গোটা দুনিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সঙ্গে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল। আফ্রিকার দেশগুলোসহ বেশ কয়েকটি দেশে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না। বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে চলেছেন। তবে সেই প্রশংসায় গা না ভাসিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যথার্থ দেশনেত্রীর কাজই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া বিএনপি এখন দুর্ভিক্ষ নিয়ে অপপ্রচারে মেতেছে। জামায়াতের দোসর বিএনপির উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বতোভাবে প্রস্তুত।
গোটা দুনিয়ার খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিককালে তার বিভিন্ন ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের শিকার না হয় সেজন্য খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যেরই ভুল ব্যাখ্যা করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে বিএনপি। গোটা দুনিয়ার নেতিবাচক পরিস্থিতিতে নিজের দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তিনি সেই দায়িত্বই পালন করে চলেছেন। কারণ, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও খাদ্য স্থিতিশীলতার প্রশংসা করলেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আশঙ্কা, ২০২৩ সালে ৪৫টি দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই প্রয়োজন হতে পারে ২০ কোটি মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা। এফএও এবং ডব্লিউএফপির যৌথ রিপোর্টে কোথাও বাংলাদেশে সংকট হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন আফ্রিকায় ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে। তাই ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও সাউথ সুদান ছাড়াও ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন তারা। দুনিয়ার এসব দেশের সম্ভাব্য খাদ্য সংকটকালে শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্বের প্রথম সারির খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাতে ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে সেই বার্তাই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা দেশবাসীকে বলছেন, কোনও খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান। সারা বিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি, সবার প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব। একইসঙ্গে তার বার্তা, পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য – এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যা আমাদের দেশের মানুষ কেবল নয়, সারা বিশ্বের মানুষেরই এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। বিশ্ব রাজনীতির একজন দায়িত্বশীল নেত্রী হিসেবে তিনি সঠিক বার্তাই দিয়েছেন প্রিয় দেশবাসীকে।
অথচ, তার এই বার্তাকেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুধু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে অপব্যাখ্যা করে চলেছেন। তিনি বলছেন, সমস্যাটা তো আমরাও বুঝতে পারছি না। কারণ, ওনারা কিছু দিন আগেও দাবি করেছেন খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ হয়ে গেছেন। আজকে কি এমন ঘটলো যে তারা এখন ভয় পাচ্ছেন, খাদ্য সংকট দেখা দেবে। প্রধানমন্ত্রী একবারের জন্যেও নিজের দেশের খাদ্য সংকটের কথা বলেননি। উৎপাদন বৃদ্ধি যেকোনও দেশেরই চলমান প্রক্রিয়া। তাই তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া নিজের দেশে খাদ্যের সংকট নেই, এই আনন্দে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো মোটেই রাষ্ট্রনায়কের কাজ হতে পারে না।
আন্তর্জাতিক স্তরেও মুজিবকন্যার দায়বদ্ধতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের হাত ধরে গোটা দুনিয়াই খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রয়োজন মতো বাড়ছে না। তাই বাংলাদেশের সব জমিকে চাষের আওতায় আনার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান তথা অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর যে কথা বলছেন সেটি বাস্তবসম্মত। কারণ, খাদ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। অথচ, বিএনপির নেতারা অর্থনীতিবিদদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু বিরোধিতা করার জন্যই হাসিনা বিরোধিতায় সুর চড়াচ্ছেন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হতাশা তাদের যত বাড়ছে,ততই প্রকট হচ্ছে অপপ্রচার।
বিএনপির অপপ্রচারের বিপরীতে বাংলাদেশ কিন্তু এগিয়ে চলেছে তার সোনার বাংলার লক্ষ্যে। আয়তনে ছোট হয়েও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বিভিন্ন সূচকে খাদ্য উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান সত্যিই প্রশংসনীয়। এফএওর তথ্যানুযায়ী, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। ধান উৎপাদনে চতুর্থ এবং আলু উৎপাদনে সপ্তম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে আমরাই। একাত্তর সালের পর থেকে আমাদের ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়। গম উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুণ। সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশগুণ। দেশে এখন ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষের সঙ্গে যুক্ত।
শুধু খাদ্যই নয়, দেশের অর্থনীতিও যথেষ্ট স্থিতিশীল। শ্রীলঙ্কার ৬০ এবং পাকিস্তানের ২৫ শতাংশের বিপরীতের বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৭.৫ শতাংশ। মাথায় রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কাছাকাছি এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। গত ১১ মাসে মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার দাম প্রায় ১০ টাকা কমেছে। বর্তমানে ৯৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। অথচ পাকিস্তানি রুপি এখন ডলার পিছু ২৩৫ এবং শ্রীলঙ্কার ৩৬৫।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী জাতীয় গড় আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা। এরপরও অনেকে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে হাওয়া গরম করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। কিন্তু সাফল্যেও আত্মতুষ্টিতে না ভুগে দেশনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। সরকারি খরচ কমিয়ে দেশবাসীকে সুরক্ষিত রাখতেও সচেষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার।
জার্মান ও ব্রিটেনের মতো দেশ সংকট মোকাবিলায় নাগরিকদের সহায়তা কামনা করছে। এই দেশগুলোর সরকার ও বিরোধী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বৈশ্বিক মোকাবিলা করছে, তখন বাংলাদেশকে ধ্বংস করে হলেও সরকারকে গদি থেকে নামাতে ব্যস্ত বিএনপি। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের মানুষের চাহিদার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে রাজপথে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তাদের। কিন্তু বাংলাদেশকে বৈশ্বিক এই সমস্যা মোকাবিলা করতে যা প্রয়োজন সেই পথে হাঁটতে নারাজ বিএনপি-জামায়াত। আর এটাই তাদের জনবিচ্ছিন্নতার মূল কারণ।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com