1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুনামগঞ্জ বিজিবি : বন্যা দুর্গতের সেবায় খুলে দিয়েছে হৃদয়ের অর্গল

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি ::
এবারের ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি মানুষের খোঁজ নিতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ত্রাণ তৎপরতা লক্ষ করেছি। মনের ভিতর অনেক স্থিরচিত্র গেঁথে আছে। গাছের আড়ালে, নৌকায়, কোমর পানিতে নেমে আসা ত্রাণের হাতগুলো চোখে ডেকেছিল বান। তখন শামসুর রাহমানের এই কবিতাটি হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, ‘একটি গাছের হাত অভিবাদনের/ ভঙ্গিতে আমার দিকে ওঠে আসে; তাকে/ কিছু কথা বলতে গিয়েও থেমে যাই। হাত নাড়া/ দেখি, দূরে পাথরের বুকে/ জলরেখা ফোটে, তবু গলেনা হৃদয়/ মানুষের’। এই মহাপ্লাবনে অনেক মানুষের হৃদয় না গললেও সুনামগঞ্জ বিজিবি বন্যার ভয়াবহত দেখে খুলে দিয়েছিল হৃদয়ের অর্গল। দাঁড়িয়েছিল বানভাসি মানুষের পাশে। যা এখনো বন্যা দুর্গত এলাকায় চলমান আছে।
তাই এবারের সর্বকালের ভয়াবহ বন্যায় বানভাসি মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি। নিজেদের ব্যাটালিয়নের অফিস, আবাসিক সবগুলো ভবনের নিচতলা, রাস্তাঘাট, গাড়ির গ্যারেজ, মালখানা, অস্ত্রাগারের ম্যাগাজিন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পরও তারা বন্যার পরদিন থেকেই বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ভূতুড়ে শহরের সব বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট যখন পানির নিচে তখন বিজিবি’র ভেসে থাকা প্রধান গেটে নিজেদের রেশন থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ, জেনারেটরের বিদ্যুতে পানির জন্য হাহাকার করা বানভাসিদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেছে তারা। এখনো জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় গিয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ করছে তারা। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দেখে বিজিবি’র সদর দফতর, আঞ্চলিক অধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডারের কার্যালয় থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুন বিকেল থেকে সুনামগঞ্জে ঝড়, ভারী বর্ষণ, বজ্রপাত শুরু হয়। হুহু করে বাড়তে থাকে পানি। রাত ১২টার মধ্যে ব্যাটালিয়নের সব ভবনের নিচতলা, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জেলা সদরের প্রধান সড়ক সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিজিবি’র দুটি বিওপি পানিতে ভেসে গেলে দ্রুত অন্যত্র সরানো হয়। মানুষ নিজেদের উদ্ধারের জন্য হাহাকার করলেও কেউ কারো যোগাযোগ নিতে পারছিল না। অবর্ণনীয় এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ডুবে থাকা শহর ও জেলার ৫টি উপজেলার মানুষজন আতঙ্কে আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। এই দুঃসহ ও ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ১৮ জুন থেকে সুনামগঞ্জ ও সিলেটে উদ্ধার তৎপরতার জন্য সেনা, নৌ ও কোস্ট গার্ড তলব করে। কিন্তু যোগোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এই বাহিনীগুলো আরও দু’দিন পরে সুনামগঞ্জে আসে।
জেলা শহরের এই দুর্বিষহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.ক. মো. মাহবুবুর রহমান ১৭ জুন (শুক্রবার) সকাল থেকেই ডুবে যাওয়া ব্যাটালিয়ন থেকে কোমরপানি ভেঙে নিজের তত্ত্বাবধানে প্রধান গেটে এসে খিচুরি রান্না করা শুরু করেন। তখন শহরের সব দোকানপাট, হোটেল, পানির নিচে। ডুবে যাওয়া মানুষ উদ্ধারের জন্য হাহাকার করছে। যারা উদ্ধার হয়ে নিরাপদে আসতে পেরেছিলেন তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। এই অবস্থায় বিজিবি অধিনায়ক নিজেদের রেশনের চাল, ডাল, তেল দিয়ে খিচুরি রান্না করে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ শুরু করেন। ওইদিনই তিনি পানির জন্য হাহাকার টের পেয়ে নিজেদের জেনারেটর দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে গভীর নলকূপ থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ শুরু করেন। খবর পেয়ে পরদিন থেকেই খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য লাইন ধরতে শুরু করে মানুষ। ভয়াবহ বন্যায় যখন রাস্তাঘাট বাসাবাড়ি ডুবে মানুষের জরুরি চিকিৎসা বন্ধ তখন ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ের সামনে নিজেদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে বিনামূল্যে ওষুধও সরবরাহ করতে শুরু করে। শত শত মানুষ লাইন ধরে চিকিৎসা নেন। বিজিবি’র মেডিকেল অফিসার মেজর ডা. নাজমুল হাসান ওই সময় ব্যাটালিয়নের প্রবেশ গেট থেকে দুর্গম এলাকায় গিয়েও চিকিৎসা প্রদান করেন।
এভাবে বানের জলে ডুবে যাওয়া জেলা শহরে ১৭ জুন থেকে ২১ জুন বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক আসার আগ পর্যন্ত রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে শহরের বাইরে দুর্গম এলাকায় শুরু করে ত্রাণ তৎপরতা। যা এখনো চলমান আছে।
সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা কবলিত সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও বিশ্বম্ভরপুরসহ ৫টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৪০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। যাতে চাল, ডাল, তেল, ময়দা, চিনি, চিড়া, মুড়ি, বিস্কুটসহ নানা পণ্য রয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ৮০০ প্যাকেট রান্না করা খাবারও বিতরণ করা হয়।
শহরের মল্লিকপুরের বাসিন্দা লাকি বেগম বলেন, আমাদের বাসা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। জেলা পরিষদের দোতলার বারান্দায় এসে ওঠেছিলাম। সঙ্গে ছিল এক কাপড়। খাবার, পানি কিছু ছিলনা। এই সময় বিজিবি’র গেট থেকে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পেয়ে বাঁচতে পেরেছি।
শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, আমার বাড়িতে কোমরপানি ছিল। কোনমতে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠতে পেরেছিলাম। সঙ্গে কিছু ছিল না। তখন বিজিবি’র গেইট থেকে রান্না করা খিচুড়ি ও বিশুদ্ধ পানি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে। পানিতে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন চিকিৎসা ও ওষুধও দিয়েছে। বিজিবি’র প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. ক. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চোখের সামনেই ব্যাটালিয়নের সব রাস্তাঘাট, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনগুলোর নিচতলা ডুবে যাওয়া দেখেছি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বন্যার এই বিভীষিকা ও মানুষের হাহাকার দেখে আমরা প্রথমে এই অবস্থার মধ্যেই রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসাও আমরা দিয়েছি। এখনো আমরা ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এই কাজে আমাদের এই কাজে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করছে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com