1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শহর ও নগরে বর্জ্য ও তারের জঞ্জাল

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

:: মোহাম্মদ আব্দুল হক ::
যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানোর সুযোগ বেশি সেখানে সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে, এমন আশা করাটাই স্বাভাবিক। মানুষ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা ও সুন্দরের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং সুন্দর জীবন যাপনের আশায় সুন্দরের দিকে ছুটে। মানুষের জীবনের প্রয়োজন মিটানোর জন্যে ধীরে ধীরে গঞ্জ, শহর, নগর গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো সেই প্রাচীন যুগ থেকে। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থে ধীরে ধীরে সুযোগ সুবিধা একটি কেন্দ্রে পাওয়া যাবে এমন ধারণা থেকে গড়ে উঠেছে শহর এবং বড়ো নগর। মানুষ তাই শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যিক সুবিধার জন্যে এবং একটু সুন্দর করে জীবন উপভোগ করার জন্যে প্রিয় গ্রাম ছেড়ে কাছাকাছি কিংবা একটু দূরের শহরে ছুটে যায়। তাই শহরের প্রধান সড়ক থেকে ছোট ছোট রাস্তা ও অলিগলিতে মানুষের ভিড় দেখা যায়। রাত পোহালে যেসব শহরে ও নগরে যে হাজার হাজার মানুষের চলাচল দেখতে পাওয়া যায়, তারা সকলেই কিন্তু ওই শহর বা নগরের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। দিনভর শহরের ভূমি অফিস, জজ আদালত, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, ব্যাংক, প্রেসক্লাব, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট ডাক্তারের চেম্বার, উকিল সাহেবের চেম্বার, বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটা, পাইকারি বাজারে, বাসস্ট্যান্ডে, প্রবাসী স্বজনদের জন্যে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে মানুষ আর মানুষের ব্যস্ত সময় কাটে, তাদের বড়ো অংশই সকালে আসেন প্রতিদিনের প্রয়োজন মিটানোর জন্যে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও শহরতলি থেকে এবং দিনশেষে তাদের অধিকাংশ আবার ফিরে যান নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে। কিছু মানুষ পরের দিন কাজ সেরে যাওয়ার জন্যে আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করে। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাসায় রাতে থাকেন এবং অনেকেই দুই তিন দিন বেড়ানোর জন্যে শহর থেকে শহরে আসেন। সকলেই প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি শহর বা নগরের সুন্দর পরিবেশের খোঁজ করেন এবং দেখেন। আমরা যারা নিয়মিত শহরের জীবনে কাটাই আমরাও সুন্দর খুঁজে ফিরি এবং দেখি। কি দেখি?
শহরে বড়ো বড়ো পাকা দালানের ঘনবসতি দেখা যায়। উঁচু উঁচু দালানের ভবন দেখে একবিংশ শতাব্দীর গ্রাম কিংবা শহরের মানুষ এখন আর অবাক হয় না। এখন আর বিংশ শতাব্দীর আশি বা নব্বই দশকের মানুষের মতো কেউ হঠাৎ শহরে এলে উঁচু দালান দেখে দাঁড়িয়ে ঘাড় বাঁকা করে এক দুই তিন চার পাঁচ বলে বলে দশতলা বা বিশতলা ভবন গুণে না। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের মানুষের মতো এখন আর শহরের রাস্তায় রাতের বেলা রঙিন বাতি দেখে গুনগুনিয়ে গায় না, “ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে / লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখা নয়ন জুড়াইছে।” এখন শহরের রাস্তায় নানান আকৃতির নানান বর্ণের গাড়ি দেখেও কেউ বিস্মিত হয় না। মানুষের মনে বিস্ময় জাগে এতো এতো সুন্দর ভবন, গাড়ি, ফুটপাত, ঝলমলে বাতি, এতো এতো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পুলিশ এবং হাজার হাজার শিক্ষিত শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নেতা যে শহর বা নগরে প্রতিদিন চলে ও বসবাস করে সেই শহরের রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ বিভিন্ন ভবনে ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল দেখে। হ্যাঁ, আমরা যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ি এবং নিয়মিত শহরে সুন্দর পরিবেশের খোঁজে বের হই, আমরাও প্রতিদিন শহরের পাড়ায় পাড়ায়, গলিতে গলিতে, গলির মোড়ে, বড়ো রাস্তার পাশে, বিদ্যালয় ও বাণিজ্যালয়ের আশেপাশে তা-ই দেখি।
শুরুতেই লিখেছি, যেখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও অন্যান্য সুবিধা বেশি মিলে, সেখানে অধিক সৌন্দর্য প্রত্যাশা করে মানুষ। আর যেখানে সুন্দর ফোটে সেখানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় থাকে। বাস্তবে ঘুরে ঘুরে আমরা কি দেখি! আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম, সিলেট সিটি করপোরেশন এবং বঙ্গোপসাগরের কূলে পর্যটন শহর কক্সবাজার পৌরসভা থেকে মেঘালয়ের পাদদেশে সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সুনামগঞ্জ পৌরসভা এবং নতুন নতুন গড়ে উঠা ছোট আয়তনের ছাতক, সীতাকুণ্ড, বড়লেখা পৌরসভা সহ বাংলাদেশের সবখানেই পৌরবাসীর বা নগরবাসীর জীবনের ভোগান্তির অন্যতম একটি হলো শহরের যত্রতত্র বর্জ্য ও তারের জঞ্জাল। ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা প্রথম আলো’য় প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র’, দৈনিক অধিকার পত্রিকায় শহর ও নগরের পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা মূলক লেখা প্রকাশ হয়, সিলেট থেকে প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক সিলেটের ডাক এ সিলেট নগরীর রাস্তার পাশে ময়লা ও খুঁটিতে ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ ছাপা হয় এবং সিলেটের ডাক এর নিয়মিত কলামিস্টরা নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরীর মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি পরামর্শমূলক লেখা লিখে সিলেট সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জনগণকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেন। সুনামগঞ্জের বহুল পরিচিত পত্রিকা সুনামকণ্ঠ সুন্দর পরিবেশের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সময়ে লেখা ছাপে। হ্যাঁ, পত্রিকার কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকেন। ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রাস্তায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। দিনের আলোয় ওইসব বর্জ্যরে স্তূপ থেকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় মাছি ভনভন করে এদিকে ওদিকে উড়ে চলে যাচ্ছে এবং কুকুর বেড়াল কাক ময়লা ঘেঁটে মরা ইঁদুর ইত্যাদি টেনে আশেপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে নগরবাসীর সুস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। আর লক্ষণীয় বিষয় হলো, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুতের তারের পাশাপাশি কতো রকমের তার যে ঝুলে থাকে, তা দেখে সচেতন নাগরিক চলতে পথে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকে থমকে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ায় কুন্ডলী পাকানো তারের জঞ্জাল দেখে ভয় জাগে। ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় প্রতিদিন শহরের কোনো কোনো জায়গায় দেখা যায় মই বেয়ে উঠে যাচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি ঘেঁষে ইন্টারনেট ও ক্যাবল সংযোগের কাজে নিয়োজিত লোকেরা। নিরাপত্তার কথা ভাবলে ভয় জাগে। বিস্ময় জাগে! বিস্ময় জাগে!! বিস্ময় জাগে!!!
বাংলাদেশের শহর ও নগরের সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে শহরবাসী বা নগরবাসীর জীবনের পথ সুশৃঙ্খল করা ও পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থা করার জন্যে গড়ে উঠেছে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এর মতো স্থানীয় পরিষদ। নির্দিষ্ট এলাকায় সচেতন জনগণ তাদের মূল্যবান ভোটটি দিয়ে তাদের মেয়ের ও কাউন্সিলর নির্বাচন করেন এবং প্রয়োজনীয় ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে নগরবাসীর জন্যে নিরাপদ পরিচ্ছন্ন রাস্তা, শিশুসহ সকল মানুষের জন্যে খেলার মাঠ, নির্বিঘ্নে পায়ে হেঁটে অল্প দূরত্বের গন্তব্যে যাওয়ার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করবেন স্থানীয় পরিষদ। কিন্তু; বাংলাদেশের কোনো শহরেই নিশ্চিন্ত মনে নির্বিঘ্নে পায়ে হেঁটে ফুটপাতে চলার ব্যবস্থাটুকু নেই। জনগণের টাকা খরচ করে জনগনের পায়ে হেঁটে চলার জন্যে বানানো ফুটপাত পুলিশের সামনেই দখল হয়ে যায়। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা সব শহরের ফুটপাতের চিত্র একই। ফুটপাত দখলমুক্ত হোক। ফুটপাত ব্যবসার জায়গা নয়, বর্জ্য ফেলার জায়গা নয় বা ফুটপাতের উপর বিশৃঙ্খল অবস্থায় ডাস্টবিন থাকাও অনুচিত। ফুটপাত চব্বিশ ঘণ্টা আবর্জনা মুক্ত থাকবে এবং ফুটপাত দখলমুক্ত থাকবে মানুষের চলাচলের জন্যে।
একবিংশ শতাব্দীর এক পঞ্চমাংশ সময় পাড়ি দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিতে দিতে আমরা শহরে দেখতে পাই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম অফিস আদালতের সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলে থাকে তারের জঞ্জাল আর খুব সহজে চোখে পড়ে বাসা, হোটেল, দোকান থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে যত্রতত্র। বুঝা যায়, এখনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নাই। এভাবে চলতে থাকলে আগামী পঞ্চাশ বছর ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশের শততম স্বাধীনতার সময়েও দেখা যাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু; মানুষের বসবাসের জন্যে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর শহর বাংলাদেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ সকল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সুন্দর শহর গড়ার প্রক্রিয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না-হলে, সকল সুন্দর আয়োজন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। জনগণের টাকার অপচয় হবে। শহরে ও নগরে খুঁটিতে প্যাঁচানো তার ও উপরে ঝুলে থাকা তার, এসব তারের জঞ্জাল অপসারণ না-করলে নগরবাসীর জীবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিতে হবে। সর্বোপরি মেয়র মহোদয়, পুলিশ প্রশাসন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, জনসাধারণ সকলকে সচেতনভাবে সুন্দর পরিবেশ সুন্দর শহর গড়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে আন্তরিকভাবে।
[লেখক : কলামিস্ট ও সাহিত্যিক]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com