পীর জুবায়ের ::
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ। এই বিদ্যালয়ে ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২৯ জন। অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়েও ৫২ জন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র ৩০ জন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের এই অবস্থা শুধু এই দুটো সরকারি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়েই নয়। পুরো জেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। জেলার ১১টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৬৯টি শিক্ষক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা শিক্ষক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানায়, জেলার ১১টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪৩টি বিষয়কভিত্তিক পদের বিপরীতে ৪৬৯টি পদ শূন্য। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের ৩৩টি, ইংরেজি বিষয়ের ৩৪টি, গণিতে ১৭টি, আইসিটি বিষয়ে ৫৩টি, সামাজিক বিজ্ঞানে ১১টি, কৃষিতে ২৫টি পদ শূন্য। এছাড়া ভৌত বিজ্ঞানে ৫৬টি পদ, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের ৩৬টি পদ, লাইব্রেরি ও তথ্য বিজ্ঞানে ৩৮টি পদ, চারু-কারু বিষয়ে ৩টি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ২টি, নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ৭টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
অপরদিকে, এবতেদায়ি মৌলভীর শূন্যপদ ২৫টি, সহকারী মৌলভীর ৪২টি পদ শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি সহকারী মৌলভী ক্বারী পদ ৫টি, আরবি প্রভাষক ৬টি, প্রভাষক কম্পিউটার অপারেশন ১টি, এবতেদায়ি প্রধান ৮টি, এবতেদায়ি শিক্ষক ৪টি, জীব বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের ১৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (জেনারেল ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কস) ১টি, সহকারী শিক্ষক পদার্থ ২টি, সহকারী শিক্ষক রসায়ন ২টি, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (সিভিল) ১টি, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর (ইলেক্ট্রিক্যাল) ১টি, প্রভাষক উদ্যোক্তা উন্নয়ন ১টি, প্রভাষক ব্যবস্থাপনা ১টি; সহকারী শিক্ষক ব্যবসায় শিক্ষা ১টি, প্রভাষক বাংলা ৪টি, প্রভাষক ইংলিশ ২টি, প্রভাষক পৌরনীতি ২টি, সহকারী শিক্ষক হিসাব বিজ্ঞান ১টি, সহকারী শিক্ষক হিন্দু ধর্ম ৪টি, এবতেদায়ি ক্বারী ৯টি, প্রভাষক আইসিটি ৪টি, প্রভাষক সামাজিক বিজ্ঞান ২টি, জুনিয়ার মৌলভী ৩টি, সহকারী শিক্ষক খ্রিস্ট ধর্ম ১টি, ডেমোনেস্ট্রেটর (আইসিটি) ১টি, লেকচারার (ইতিহাস) ২টি, লেকচারার (যুক্তিবিদ্যা) ১টি, ডেমোনেস্ট্রেটর (ফিজিক্স) ১টি, ডেমোনেস্ট্রেটর (ক্যামেস্ট্রি) ১টি পদ শূন্য রয়েছে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নিতে হয়। এতে করে কাক্সিক্ষত পাঠদান সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, জেলার সনামধন্য বিদ্যাপীঠে শিক্ষক সংকট থাকাটা খুবই হতাশার। আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদের চাহিদামতো পাঠ দিতে পারছি না। এক বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিষয়ের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সবটুকু দিতে। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। যদি চাহিদামত শিক্ষক না থাকে তাহলে এই ছাত্ররা কিভাবে শিখবে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শিক্ষকের স্বল্পতা। ৫২ জন শিক্ষকের সৃষ্ট পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৯ জন শিক্ষক। ২৩ জন শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে একদিন প্রতিষ্ঠানটি নিজের ঐতিহ্য হারাবে।
জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩৪টি। বেশির ভাগ বিদ্যালয় শিক্ষক সংকট থাকলেও আমরা কর্তৃপক্ষকে অবগত করে চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শিঘ্রই শিক্ষক সংকট সমাধান হবে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় অনেক শিক্ষক সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত এর সমাধান হবে।