1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কাছেই বেড়ানো আর একজন রাকেশ চৌধুরী

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

:: অ্যাড. মলয় চক্রবর্তী রাজু ::
৬ ফেব্রুয়ারি/২০ তারিখে ‘সুনামগঞ্জ নিয়ে ভাবনা’ শীর্ষক লেখায় পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে আমার একটি লেখা ‘সুনামকণ্ঠে’ ছাপা হয়েছিল। এ বিষয়ে ধারাবাহিক লেখা চালিয়ে যাব বলে ভেবে রেখেও ছিলাম। কিন্তু মহামারী সব ওলটপালট করে দিল। মহামারী চলাকালীন বদ্ধ জীবনে সবার মনেই ঘুরে বেড়ানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছিল। সামাজিক মাধ্যমে মহামারী শেষ হলে ‘কোথায় কোথায় বেড়ানো যায়’ তার একটা প্ল্যান সবার পোস্টেই দেখে মনে হচ্ছিল একটা মানবপ্লাবন সুনামগঞ্জের দিকে ধেয়ে আসছে। হলোও তাই। সারা সপ্তাহ যেমন তেমন, বৃহ¯পতিবার থেকে শনিবার যেন সুনামী হয়ে যাচ্ছে শহরে। টাঙ্গুয়ার দিকে একটা জনপ্লাবন যে ছুটছে তা যেন আর থামছেই না। সারাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ছুটে আসছে রিক্রিয়েশনের জন্য। সরকারিভাবে ব্যবস্থাপনা জানিনা, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোটামুটিভাবে মানুষ হাওর ভ্রমণ করে বেশ তৃপ্ত হয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
গত বছর যখন লেখাটা প্রকাশ পায় তখন শুনেছিলাম সংস্কৃতি আর পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এক করে পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে সরকার এগোবে। যাতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বাংলা-বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি স্বাদও গ্রহণ করতে পারেন। জানিনা হয়তো মহামারীর জন্য পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে প্রশাসন কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন তা কিন্তু অবশ্যিই ধন্যবার্হ।
এরমধ্যে বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও সাহেবের উদ্যোগে বোয়াল চত্বর, হাওর বিলাস আর পাহাড় বিলাস বেশ পর্যটক টানছে। অনেকেই যাচ্ছেন। উপভোগও করছেন। আমি নিজেও ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি। ফেসবুকে ‘অসংখ্য মানুষের’ আনন্দময় ভ্রমণের ছবি আমাকে টানতে লাগলো। জেলরোডের প্রদীপদাও (প্রদীপ দাস) খুব উৎসাহী। একদিন বেড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলাম। দুটি জায়গাকে বাছাই করলাম আমরা যারমধ্যে একটি প্রকৃতিকে অবলম্বন করে সৃষ্ট খোলামেলা পাহাড় বিলাস আর একটি মানবসৃষ্ট প্রাচীন গৌরারং জমিদার বাড়ি। প্রথমটাতে প্রচারের কারণে বেশ জনসমাগম আর দ্বিতীয়টায় নীরব সুনসান। যেন কালের সাক্ষী হয়ে মৌনী সাধুর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
পাহাড় বিলাস স্পটটি এখনো পূর্ণতা না পেলেও দূরের পাহাড় আর বিশাল মাঠ মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। তবে যাওয়ার রাস্তাটি বড়ই দুর্গম। এই স্পটটিতে যাওয়ার জন্য নদীপথেও ব্যবস্থা করা যায়। উদ্যোক্তাদের মাথায় এ বিষয়টি হয়তো আছে। আর জায়গাটি খোলামেলা রাখতে কঠোর হতে হবে। যেভাবে রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে হয়তো বেড়ানোর জায়গারই একসময় অপ্রতুলতা দেখা দেবে। তবে আমাকে আমার মনকে শীতল করে দিয়েছে গৌরারং জমিদার বাড়ি। ভগ্নপ্রায় জমিদারবাড়ি অবহেলায় পড়ে আছে। মাঝে এই জমিদারদেরই উত্তরপুরুষ নরওয়ে প্রবাসী রূপক চৌধুরী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাধার কারণে তিনি এগোতে পারেননি বলে গ্রামবাসী জানালেন। সরকার একটু নজর দিলে শহরের পাশের এই স্থানটি যে দারুণ একটা পযর্টন স্পট হয়ে উঠতে পারে তা গেলেই বুঝা যায়। এখনো টিকে থাকা পুরনো স্থাপনাগুলো মানুষকে পেছনের সময়ে নিয়ে যাবে। এই ঘরবাড়িতে থাকা পুরনো মানুষজনসব যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে দালানগুলোর ভেতরে প্রবেশ করলে। গ্রামের মানুষজনও বেশ আন্তরিক। তারা আমাদের শোনালেন এ বাড়ির গল্প। রশিদ মিয়া পাশেই পুকুরের ঐপাড়ে থাকেন। তিনি শোনালেন জমিদারদের কথা। উনিশশত পঞ্চাশ সালে জমিদারি চলে গেলেও এই পরিবারের সদস্যদের প্রজারা ঠিকই সম্মান আর শ্রদ্ধা করতো তাদের শালীন ব্যবহারের জন্য। তাদের পূর্বপুরুষ রাধাকান্ত রায় চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র রাধাগোবিন্দ চৌধুরীর সময়ই মূলতঃ এই জমিদারির প্রসার ঘটে। তাঁর সময়েই এইসব দালান নির্মিত হয়। রশিদ মিয়ার কথাতেই উঠে এলো একজনের নাম। জমিদার রাকেশ চৌধুরী। অসম্ভব জ্ঞানী এই রাকেশ চৌধুরী ব্রিটিশ শাসনের একেবারে শেষ লগ্নে সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন চার বছর। শান্তিনিকেতন থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। তারপর ধাপে ধাপে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, মো. আলী জিন্নাহ থেকে শুরু করে সেই সময়ের তাবড় তাবড় সাহিত্যিক, কবি, নেতাদের সাথে তাঁর পরিচয় ছিল। এছাড়া আরও অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন রাকেশ চৌধুরী। অথচ এ শহরের ক’জন লোকই তাঁকে মনে রেখেছে? প্রদীপদা’র আকুতি ‘এইসব ক্ষণজন্মা মানুষদের স্মৃতি রক্ষায় আমাদের অবশ্যই কিছু করা দরকার’। গৌরারং গ্রামবাসী যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারাও তাদের এই সহৃদয় জমিদারবাবু স্মরণে কিছু করার জন্য তাগিদ দিলেন।
ভগ্নদশা দালানের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কেমন ছোট মনে হলো। আসলেই এই প্রান্ত জেলার প্রাচীন মানুষগুলো কতভাবে এ অঞ্চলকে তাঁদের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন। আমরা কি তাঁদের এই অবদানগুলো মনে রেখেছি? ফেরার পথে রাকেশ চৌধুরীর কথা মনে হচ্ছিল। সেইসময়ের দুর্গম এই এলাকা থেকে কি অসীম জ্ঞানপিপাসা নিয়ে একটা মানুষ তখনকার সুদূর কলিকাতা পর্যন্ত গিয়েছিলেন। আবার সেই জ্ঞানের আলো পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলের মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতো আরও অনেকে এই কাজে ব্রতী ছিলেন। আমরা তাঁদের কত সহজেই ভুলে গেছি। আর এজন্য পরবর্তী প্রজন্ম কি আমাদের ক্ষমা করবে?

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com